wari meenabazar Mobileshop

বাংলাদেশে ই-কমার্স: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ (২)

জাহাঙ্গীর আলম শোভন

২০১৪ সালে ই-ক্যাবের যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে ই-ক্যাব বাংলাদেশে ই-কমার্সের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করেছে এবং কথা বলেছে। অসংখ্য আড্ডা, মিটআপ, সেমিনার, বাজেট বক্তৃতা, পলিসি মিটিং এবং সরকারী মিটিং এ ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ  ও এসব মোকাবিলায় করনীয় নিয়ে আলোচনা করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন নীতিমালা ও পলিসিতে ই-ক্যাবের বিভিন্ন প্রস্তবনার প্রতিফলন ঘটেছে। আরো অর্ধ-শতাধিক প্রস্তাব ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে বিবেচনাধীন রয়েছে।

চলতি বছর ই-ক্যাব আগের অবস্থানে নেই।  ইক্যাব ৫ বছর আগে যেমন আজকের বিষয় নিয়ে কাজ করেছে। তেমনি করে ১০বছর পরের ইস্যু নিয়ে বর্তমানে কাজ শুরু করেছে। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এই সামর্থ বা সক্ষমতা দিয়ে েইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নানাবিধ সদসম্যা থাকা সত্বেও।

আগের লেখায় ই-কমার্সের বর্তমান ভবিষ্যতের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আজ কিছু সাইড-পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করছি।

১।  ডিজিটাল ডেলিভারী সার্ভিস ও বাংলাদেশের বর্তমান অনলাইন পণ্য ডেলিভারী সেবা

 নতুন অনেক ই-কমার্স ভিত্তিক পণ্য ডেলিভারী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ডেলিভারী সেবায় যুক্ত হয়েছে। ঢাকার বাইরে অনেকে হোম ডেলিভারী সেবার পরিধি বাড়িয়েছে। ডেলিভারী সেবায় অনেকে অটোমোশন এনেছেন। এখানে সম্পূর্ণ অপারেশন প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্ভব। মনিটরিং, ট্র্যাকিং এবং কনফার্মেশন সবই ডিজিটাল পদ্ধতি করছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। অনলাইন বুকিং এর পাশাপাশি অনলাইন পেমেন্টও করা যায় ডেলিভারী সেবার বিপরীতে।  ই-কমার্স সেক্টরে বর্তমানে প্রতিদিন ১ লক্ষ মানুষকে এই সেবা দেয়া হচ্ছে।  ডেলিভারী সেবার পরিধি বৃদ্ধি পেয়ে চাল, ডাল তৈরী খাবার থেকে শুরু করে কুরবানির পশু পর্যন্ত ডেলিভারী দেয়া হচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে যা সহজে করা সম্ভব হয়েছে। রেস্টুরেন্ট রান্না করা খাবার, বাসায় রান্না করা খাবার, ক্যাটারিং সার্ভিসের খাবার সময় মোবাইল এ্যাপের মাধ্যমে বুকিং, পেমেন্ট এবং ডেলিভারী সম্পন্ন হয়।

২.২। বর্তমান সমস্যাগুলোকে মোকাবিলা করতে এবং সুবিধাগুলোকে কাজে লাগাতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কিভাবে কাজ করছে।

ই-কমার্স ভিত্তিক ডেলিভারী সার্ভিসগুলো ‍মূলত বিটুবি পর্যায়ে সেবা দিয়ে থাকে। MSME দের সাথে এসব সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সংযোগ ঘটাতে ফেসবুক একটা ভূমিকা পালন করছে। এখানে ই-কমার্স ভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপগুলোতে তারা একে অপরকে খুঁজে পান। এছাড়া অফিসিয়ালী ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এদের দক্ষতা ও সক্ষমতা  বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে। যেমন ট্রেনিং, মেলা ও অভিযোগের সমাধান।

গ্রামীণ পর্যায়ে সেবা দিতে তারা কখনো কখনো প্রথাগত কুরিয়ার কোম্পানী ও পোস্ট অফিসের সাহায্য নিয়ে থাকেন। লজিস্টিক সেবাদাত প্রতিষ্ঠানকে সদস্যপদ দেয়ার মাধ্যমে ই-ক্যাব তাদেরকে নজরে রাখে ও পরামর্শ দিয়ে থাকে। ফলে গত কয়েকবছরে এ খাতে সেবার মানের উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে কোভিড এর কারণে কর্মীসংকটে মানসম্পন্ন সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে তৃতীয় পক্ষের পাশাপাশি নিজেরাও ডেলিভারী টিম তৈরী করেছেন।

২.৩। বর্তমান ডিজিটাল সামর্থ ও ডিজিটাল চ্যালেঞ্জগুলো ইন্ডাস্ট্রিতে কিভাবে সমন্বয় হচ্ছে?

এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। সবসময় এটা হয়ে আসছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং ক্লায়েন্টদের চাহিদার কারণে তারা এটা করে চলেছে। যেমন, ফেক কাস্টমারের কারণে ডেলিভারী ম্যানেরা নানাভাবে বিপদে পড়েন এব্যাপারে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়া ক্রেতারা তাদের পন্যের আপডেট জানতে চায় এজন্য ট্রাকিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এ্যাপভিত্তিক ডেলিভারী সেবার ক্ষেত্রে রিভিউ’র সুযোগ রয়েছে। কিছু কিছু ডেলিভারী সার্ভিস সিস্টেম ই-কমার্স সাইটের সাথে ইন্ট্রিগেট করা যায়। যাতে অর্ডারের মেসেজ ডেলিভারী কোম্পানীর কাছে চলে যায়। এভাবে প্রতিনিয়ত এসেবায় নতুন নতুন আইডিয়া যুক্ত হচ্ছে।

ই-ক্যাবের ভূমিকা

ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ২০১৪ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে বাংলাদেশের ই-কমার্সের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। হাজার হাজার তরুন উদ্যোক্তার প্রশিক্ষন, সরকারের সাথে সহযোগী হিসেবে আইসিটি পলিসি বাস্তবায়নে ভূমিকা ও ডিজিটাল কমার্স পলিসি তৈরীতে সহযোগিতামূলক ভূমিকা রেখেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি ডিভিশন, এটুআই, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনসহ সরকারী বিভিন্ন সংস্থার সাথে যৌথভাবে ই-বাণিজ্যের উন্নয়নে কাজ করছে।  আন্তজাতিক সংস্থার মধ্যে আইসিটি, এফএনএফ, শী ট্রেডস এর মতো সংস্থার সাথেও যৌথভাবে কাজ করেছে ই-ক্যাব।

বিগত করোনাকালীন সময়ে ই-ক্যাব চালু করে মেম্বার রেজিস্ট্রেশন ও হেলথ সেন্টারসহ নানাবিধ অনলাইন সেবা। ই-ক্যাবের স্টিকার নিয়ে সদস্য প্রতিষ্ঠানের ২০ হাজার গাড়ি সারাদেশে সাপ্লাইচেইন সচল রেখেছে। নিত্যপণ্য সরবরাহ তদারকীর মাধ্যমে ই-ক্যাব ডিজিটাল অর্থনীতির চাকাকে করেছে অধিকতর গতিশীল। ডিজিটাল হাটের মাধ্যেমে কোরবানি পশু বিক্রি, আমমেলার মাধ্যমে বাগান থেকে সংগ্রহ করা ক্যামিকেমুক্ত আম বাসায় ডেলিভারী, লকডাউন এলাকায় ঘরে ঘরে নিত্যপণ্য সরবরাহ, মানবসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে হাজারো দরিদ্র পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, অনলাইনে টিসিবি’র পণ্য বিক্রির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখা এবং ইজিনিয়াস উদ্যোগের মাধ্যমে স্কুল শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশে সহশিক্ষা কার্যক্রমে গ্রহণ করার মাধ্যমে ই-ক্যাব যুগপত ভূমিকা পালন করে মানবিক সংস্থা হিসেবে নিজেদের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশ ও মানুষের পাশে থাকা, সদস্য উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কাজে সহযোগিতা এবং সরকারের পাশে থেকে উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রাখায় ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ই-ক্যাবকে ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরষ্কারে ভূষিত করেছে।

লেখক:  জেনারেল ম্যানেজার, ই-ক্যাব

6,504 total views, 2 views today

Comments

comments