
বাংলাদেশের ই-কমার্স: স্থানীয় ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জসমূহ
Jahangir Alam Shovon
বাংলাদেশে বিচ্চিন্নভাবে ই-কমার্সের বয়স যাই হোক প্রাতিষ্ঠানকিভাবে এটি মাত্র ৫ বছরের বয়সী একটি ব্যবসাখাত। মানুষের চাহিদা পূরণ ও কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা তৈরী হওয়াতে এই খাত যেমন দ্রুত বিকশিত ও জনপ্রিয় হচ্ছে যেমনি নানাবিধ সমস্যার কারণে প্রয়োজনের তুলনায় এর বিকাশ ও বিস্তৃতি যথেষ্ঠ নয়, আছে নানারকম সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা এবং বার বার বিভিন্নমূখী চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখিত হচ্ছে এই খাত। তবুও ভবিষ্যতের উজ্জল সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে হাজারো তরুন এখনো হাল ধরে আছে। বর্তমানে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন প্রায় ১ লক্ষ পরিবারকে সেবা দেয়। এই মুহুর্তে যেসব চ্যালেঞ্চ রয়েছে সেগুলো মোকাবিলা করা দরকার। ই-ক্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠান ই-ক্যাবের স্ট্যান্ডিং কমিটিসমূহ ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞের মতামতের আলোকে নিচের প্রতিবেদনটি পেশ করা হলো।
স্থানীয় পর্যায়ের চ্যালেঞ্জসমূহ
১. গ্রামীন পর্যায়ের সাপ্লাই চেইনের দূর্বলতা:
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ এবং কৃষিভিত্তিক পন্যের দেশও বটে। তথাপি গ্রামীণ পর্যায়ে ই-কমার্স সাপ্লাই চেইন দূর্বল ও ভঙ্গুর। এখনো বড়ো বড়ো কয়েকটা শহর ছাড়া অন্যান্য এলাকায় ইকমার্স ভিত্তিক লজিস্টিক চেইনগুলোর সেবার ব্যপ্তি ঘটেনি। বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের গ্রামীন পর্যায় অবধি সেবা থাকলেও তা ই-কমার্স সেবার জন্য তৈরী নয়। এতে সময় লাগে এবং পোস্ট অফিসে গিয়ে পণ্য বুক করতে হয় বলে পোস্ট অফিসের সেবা গ্রহণে ক্রেতা এবং ভোক্তা উভয়ক্ষেত্রেই আগ্রহ কম দেখা যায়।
৩. তথ্যের অপার্যপ্ততা ও বিক্ষিপ্ততা
এখানে অন্যান্য সেক্টরের মতোই ব্যাপক তথ্য ঘাটতি রয়েছে। কতোগুলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তার সঠিক হিসেব কারো কাছে নেই। একদিকে ট্রেড লাইসেন্স বা কোনোরুপ নিবন্ধন ছাড়াই কাজ করছে হাজারো প্রতিষ্ঠান। আবার যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হচ্ছে সেগুলো ই-কমার্স ক্যাটাগরিতে নিবন্ধিত হচ্ছে না এমনকি নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠানসমূহের কোনো ডেটাবেজ নেই। শুধু তাই নয় এসব প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় ও লাভ লোকসান এমনকি ক্রয় বিক্রয়ের কোনো হিসেব কোনো কতৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হয়। শুধুমাত্র ১৩০০ প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর কাছে। এর মধ্যে আর্থিক, ব্যবসা বা জনশক্তি সংক্রান্ত কোনো তথ্য সংযুক্ত নয়।
৪. নিয়ন্ত্রণহীনতা, বিচ্ছিন্নতা ও আইনের দূর্বলতা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন ভিত্তিক উদ্যোগ হওয়ার কারণে স্বাধীনভাবে বিভিন্ন ব্যবসা গড়ে উঠছে। ভার্চুয়াল সেক্টর হওয়ায় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রন নজরদারী নেই। ফলে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্যও সরকারী কিংবা বেসরকারী সংস্থার কাছে নেই। একই কারণে সরকার এই বিষয়ে কোনো নীতি পলিসি গ্রহণ করতে পারছেনা। কোনো ধরনের নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য জটিল হয়ে দেখা দিয়েছে। অধিকন্তু এই বিষয়ে সময়োপোযোগী আইনেরও ঘাটতি রয়েছে। একই কারণে বিভিন্ন অসামাঞ্জস্য অফার দেয়া হচ্ছে এবং ক্রেতাকে সঠিক সময়ে সঠিক পণ্য পৌঁছে দিতে পারছেনা।
৬. পুঁজি সংকট ও প্রনোদনার অভাব
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ এই খাতে বিনিয়োগে স্বাচ্ছন্দবোধ করেনা। ফলে নবীন ও সৃজনশীল উদ্যোক্তারা ক্যাপিটেল বা পুঁজির অভাবে দ্রুত ঝরে পড়ছে। এখানে ঝরেপড়ার হারও খুব বেশী। ব্যাংকগুলো যেমন ই-কমার্স খাতে ঋণ বা বিনিয়োগে আগ্রহী নয়। তেমনি একক বিনিয়োগের ক্ষেত্রও খুব সীমিত। অন্যদিকে এখনো পর্যন্ত এখাতে কোনোরুপ সরকারী প্রনোদনা যুক্ত হয়নি। যেমনটা অন্যান্য বিকাশমান খাত বিভিন্ন সময় দেশী বিদেশী প্রনোদনা পেয়ে আসছে তেমনটা ই-কমার্সের ক্ষেত্রে ঘটেনি।
৭. দক্ষ জনশক্তির অভাব
ই-কমার্স একটি জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসায়। এখাতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হতে থাকে। ফলে এখানে সফল হওয়ার জন্য ব্যবসা ও কারিগরি দুটো বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। যা বাংলাদেশে নেই। একদিকে বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা উদ্যোক্তা তৈরীর বিপরীত এবং পুরনো আমলের অন্যদিকে আইটি শিক্ষাও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন হয়। এমনকি বিভিন্ন প্রশিক্ষও বাস্তবভিত্তিক ও আপডেটেড নয়। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত দক্ষ ও পেশাদার জনশক্তির অভাববোধ করছে।
৮. কনটেন্ট এর মান ও নকল সমস্যা
কনটেন্ট ব বিষয়বস্থু এখানে গুরুত্বপূর্ণব্যাপার। শিক্ষা ব্যবস্থা জটিলতা ও প্রশিক্ষণ ঘাটতির কারণে এখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরী হয় খুব সীমিত। কনটন্টে এর যেকোনো প্যারামিটারে বেশীরভাগ কনটেন্ট নিন্মমানসম্পন্ন তারউপর রয়েছে পাইরেসি সমস্যা। প্রতিনিয়ত এবং অহরহ কনটেন্ট কপি, নকল ও সম্পাদনা করে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে কনটেন্ট এর স্বাভাবিক মান উন্নয়ন যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি সার্বিক ই-কমার্সের উপরও এর প্রভাব পড়েছে।
৯. সেবার মান ও রিটার্ন পলিসি
এখানে বরাবরের মতো পণ্য ও সেবার দামের ক্রমশ প্রতিযোগিতার কারণে পণ্য বা সেবার মান উপেক্ষিত থাকে। আর দশটি দেশীয় ব্যবসায় খাতের মতো এখানেও মানের চেয়ে দামের প্রতিযোগিতাই মূখ্য। এজন্য সেবার মান গড়পড়তায় রয়ে গেছে। বিশেষ করে পন্য সময়মতো ডেলিভারী নিয়ে ভোক্তাদের অভিযোগ রয়েছে প্রচুর। দেশের অন্যান্য পারিপাশ্বিক অনেক বিষয় এর সাথে জড়িত। এছাড়া এখানে বহু ধরনের পণ্য ও সেবার সম্মিলন, ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বিজনেস মডেল এবং আইনগত নির্দেশনার অভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো ভিন্ন ভিন্ন রিটার্নও রিফান্ড পলিসি অনুসরণ করে। এতে করে কখনো কখনো ক্রেতা ভোক্তার মাঝেও ভুল বোঝাবোঝি তৈরী হয়।
১০. ভোক্তাদের অসচেনতা
এটা এদেশের প্রধান সমস্যাও হতে পারে। ক্রেতারা শুধুমাত্র দাম দেখে কখনো কখনো পণ্য ক্রয় করে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ক্রেতা অস্বাভাবিক কম দাম দেখে পণ্য ক্রয় করে প্রতারিত হয়ে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে ক্রেতাদের এ ধরনের অপ্রাপ্ত মানসিকতার সুযোগ নিয়ে থাকে এক ধরনের প্রতারকচক্র। এছাড়া দেশের আইন সম্পর্কেও তারা অজ্ঞাত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারা প্রতারিত হলেও তারা দেশের আইনের আশ্রয় নিতে অনীহা প্রকাশ করে। প্রতি ৫০ হাজার ক্রেতার মধ্যে একজন ক্রেতাও আইনের দ্বারস্থ হন না। এতে করে অনেকসময় বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়না।
১১. কোভিড ১৯ সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতি
সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমনের কারণে ই-কমার্সখাত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে। এখাতে মাত্র ৮ শতাংশ নিত্যপন্যের ব্যবসা ২শ ভাগের বেশী বৃদ্ধি পেলেও ৯০ ভাগ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ৬০ থেকে ১০০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে হয়েছে দেনার দায়ে জর্জরিত। কারণ যারা অনলাইনে ব্যবসা করে তাদের শতকরা ৮৫ ভাগ পোষাক ও গ্যাজেট বিক্রি করে থাকে। বর্তমানে কোনোপ্রকার প্রণোদনা না থাকায় তারা ঘুরে দাড়াতে পারছেন না। কোভিড এর ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত ই-ক্যাবের জরিপে উঠে আসে যে, প্রায় ৫২ ভাগ প্রতিষ্ঠান দেনার দায়ে দায়গ্রস্থ এবং ৫৪ ভাগ প্রতিষ্ঠান কোভিডের কারণে তাদের স্টকে থাকা পণ্য নিয়ে বিপাকে রয়েছে।
বিগত সময়ে ই-ক্যাব এসব সমস্যা সমাধানের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি ডিভিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ বিভিন্ন সংস্থার সাথে কাজ করে আসছে।
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জসমূহ
দেশীয় উদ্যোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করে বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ রাখার প্রশ্নে, সদস্য প্রতিষ্ঠান ও শীর্ষস্থানীয় দেশীয় ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সাথে ২০১৯ সালের আগষ্ট মাসে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। উক্ত সভায় বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে ই-ক্যাব গত ২৯ আগস্ট ২০১৯ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাব আকারে প্রেরণ করে। ই-ক্যাব বিদেশী বিনিয়োগের পক্ষে তবে সেটা অবশ্যই দেশীয় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে। দেশীয় উদ্যোক্তা, দেশীয় জনবল এবং দেশীয় অন্যান্য রিসোর্সকে কাজে লাগনো এবং পুরো ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের জন্য ই-ক্যাব সংশোধনী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পেশ করে। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসেবে ই-ক্যাব দেশীয় উদ্যোক্তা ও ইন্ডাস্ট্রির বৃহত্তর স্বার্থের বিষয়ে সর্বদা সজাগ রয়েছে।
১. সরকারী স্বীকৃতি ও সংজ্ঞাহীনতা
দেশীয় ই-কমার্সের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি যেখানে ২৫% সেখানে ক্রসবর্ডার ইকমার্সে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৭৪%। তা সত্বেও একে যেমনি সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি তেমনি এর ব্যবসায়িক স্বীকৃতিও আসেনি। বৈশ্বিকভাবে একে ক্রসবর্ডার ই-কমার্স বললেও বাণিজ্য মন্ত্রনালয় একে রফ্তানীমুখী ই-কমার্স বলছে। তথাপি প্রচলিত ক্ষেত্রে পন্য রফতানী করলে রফতানীকারকেরা যে ধরনের সুযোগ সুবিধা পায় রফতানীমুখী ই-কমার্স সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে আরো ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও এই খাত এখনো পিছিয়ে রয়েছে। এই খাতের উন্নয়ন ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদেশে দেশী পন্যের বাজার সৃষ্টির ব্যপক সুযোগ রয়েছে।
২. শিপিং চার্জ
কমমূল্যে শ্রম পাওয়া যায় বলে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম তুলনামূলক কম। এসব পণ্য যখন বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজন হয়। তখন দেখা যায় পন্যের দামের চেয়ে শিপিং চার্জ অধিক। এতে ক্রেতারা পণ্য কিনিতে নিরুৎসাহ বোধ করেন। আন্তজাতিক শিপিং কোম্পানী, কুরিয়ার সার্ভিসের সেবার দাম বাংলাদেশের বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
৩. ভাষা দক্ষতা ও জ্ঞানের স্বল্পতা
শিক্ষার দূর্বলতা ও আন্তজার্তিক ভাষা চর্চার অভাবে দেশের সবখাতের মতো ই-কমার্সের খাতের কর্মী উদ্যোক্তাদের ভাষাগত দূর্বলতা দেখা যায়। ভাষার এই বাঁধার কারণে ক্রস বর্ডার ই-কমার্স করতে তরুনরা সাহস করে না। এমনকি অনলাইনে ক্রস বর্ডার ই-কমার্স করার উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কে তারা সচেতন বা ওয়াকিবহাল নয়। খুব অল্পসংখ্যক উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়।
৪. ই-কমার্সে বিদেশী বিনিয়োগ প্রসঙ্গ
বর্তমান ই-কমার্স নীতিমালায় বিদেশী বিনিয়োগের জন্য অবারিত সুযোগ রাখা হয়েছে। যা দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। তাই এ বিষয়ে ই-ক্যাবের প্রস্তাব ছিল- ইনভেন্টরী ভিত্তিক ডিজিটাল কমার্সের ক্ষেত্রে বিদেশী মালিকানায় ৫০% এর বেশী বিনিয়োগ করা যাবেনা। মার্কেট প্লেস ভিত্তিক ডিজিটাল কমার্সের ক্ষেত্রে নিন্মলিখিত শর্তসাপেক্ষে ১০০% বিদেশী বিনিয়োগ করা যাবে। শর্তসমূহ: ক) ডিজিটাল কমার্সখাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে। খ) মার্কেট প্লেস ভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পন্যের স্টক এর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারবেনা। সরবরাহের সুবিধার্থে সাময়িক (সর্বোচ্চ ৩০ দিন) গুদামজাত করা যাবে এবং শর্টিং ও প্যাকেজিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা যাবে। গ) মার্কেটপ্লেস এর বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাংলাদেশে নিবন্ধনকৃত হতে হবে। একক কোনো বিক্রেতা বা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান মার্কেট প্লেস এর মোট বিক্রির ২৫% এর বেশী নিয়ন্ত্রন করতে পারবেনা। ঘ) মার্কেটপ্লেস এর প্রোডাক্টস শিপিং বা ডেলিভারী স্থানীয়ভাবে নিবন্ধনকৃত ও মালিকানাধীন কোম্পানীদ্বারা পরিচালনা করতে হবে। মার্কেটপ্লেস নিজে কোনো ডেলিভারী বা লজিস্টিক কোম্পানীতে বিনিয়োগ করতে পারবেনা। ঙ) মার্কেটপ্লেস ভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কোনো নির্দিষ্ট বিক্রেতাকে শুধুমাত্র তারসাথে কাজ করতে বা শুধুমাত্র তার কাছে পণ্য বিক্রয় করতে বাধ্য করতে পারবেনা। চ) ভর্তুকি দিয়ে বা ক্রয়মূল্যের চেয়ে কমমূল্যে পন্য বিক্রি করা যাবে না। ছ) প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট বেতনভাতার নূন্যতম ৯৫% স্থানীয় বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রদান করতে হবে। জ) মার্কেটপ্লেসকে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ও সকল প্রযুক্তি স্থানীয়ভাবে কাস্টমাইজেশন ও পরিবর্ধণে স্থানীয় মানবসম্পদ ব্যবহার করতে হবে। ঝ) সকল ধরনের ডেটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হোস্ট করতে হবে। এছাড়া, ই-ক্যাবের আরো প্রস্তাব রয়েছে যে, বিদেশী কোম্পানীসমূহ যখন তাদের বাংলাদেশী ই-কমার্স বা মার্কেটপ্লেস এর জন্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন প্রদান করবে। তখন সেটা অবশ্যই বাংলাদেশী মুদ্রায় এবং বাংলাদেশী এজেন্সির মাধ্যমে প্রদান করার বিধান থাকতে হবে। এই বিধান না থাকলে সরকার বড়ো অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।
৫ ডেটা সেন্টার:
বর্তমানে দেশী বিদেশী অনেক কোম্পানীর ডেটা সেন্টার দেশের বাইরে রয়েছে। এক্ষেত্রে সব ডেটা না হলেও কিছু স্পর্শকাতর ডেটা অবশ্যই দেশের অভ্যন্তরে রাখার ব্যাপারে নীতিমালা থাকা দরকার। যেমনটা অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ করে থাকে।
৬. অনলাইনে পেমেন্ট কারেন্সি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য পেমেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে লোকাল কারেন্সিতে পেমেন্ট করার অপশন খুব সীমিত। এর ক্ষেত্র এবং আকৃতির ব্যাপারে আরো পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি।
৭. ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য বৈদেশিক মূদ্রার ব্যয়সীমা
ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের অনলাইন মাধ্যম থেকে ডিজিটাল প্রমোশনও ভার্চুয়াল প্রোডাক্টস ক্রয় করার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মূদ্রা ব্যয়ের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকের আলাদা কার্ড ও সেক্ষেত্রে ব্যয়সীমা নির্ধারণ করে উদ্যোক্তাদের অনলাইনে ব্যবসায় উন্নয়ন সংক্রান্ত উপকরণ ক্রয় করার সুযোগ দেয়া দরকার।
6,106 total views, 4 views today