
বর্তমান সময়ের ই-কমার্স
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
এই লেখাটা একটা বিশেষ কারণে লিখছি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গবেষক, জরিপকারী, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সরকারী দপ্তরের কাছে চিঠি বা কল পাই। অনেকে জানতে চান ই-কমার্সের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। এটা এমন একটা বিষয়, যেকোনো বিষয়ের বর্তমান ভবিষ্যৎ নিয়ে সব সময় এটা নিয়ে কথা বলা যায়। কোনো বিষয় ঠিক করতে না পারলে বিষয় ঠিক করার সহজ উপায় ই-কমার্সের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসব বিষয়ে আরো ৪/৫/৬ বছর আগে আমরা প্রচুর সেমিনার, আড্ডা ও মত বিনিময় করেছি। তার ফলশ্রুতিতে ই-ক্যাব আলাদা পলিসি কনফারেন্স করেছে এমনকি সরকার ২০১৮ সালে ‘‘ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা’’ মন্ত্রী সভায় পাস করেছে।
বর্তমানে ই-কমার্স যেহেতু বিকাশ লাভ করছে ই-ক্যাব এখন এর বিভিন্ন শাখায় কাজ শুরু করেছে। যেমন-
- রুরাল কমার্সের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে
- ক্রস বর্ডার ই-কমার্সের সুযোগ ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে
- এফ কমার্সের বিকাশ ও নিবন্ধনে করনীয় নিয়ে
- ই-বাণিজ্য অভিযো্গ ব্যবস্থাপনা
মূলত যারা এখনো বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দূরে তারা ভাসা ভাসা ধারণা নিয়ে সমস্যা সম্ভাবনার কথা বলছে। তারা এর গভীরে যেতে পারছেনা। যেমন ই-ক্যাবের হাতে এখন যে কাজগুলো রয়েছে
১। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ট্রেড লাইসেন্স এ্যাক্ট ২০১৬ সংশোধন করে ‘‘ই-কমার্স’’ সংযোজন
২। বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে ই-বাণিজ্য উদ্যোক্তাদের জন্য বৈদেশিক মূদ্রা ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ
৩। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে এক গুচ্ছ প্রস্তাবনা
৪। আইসিটি ডিভিশনে আইসিটি নীতিমালা সংশোধন
৫। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা বাস্তবায়ন
৬। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কতৃপক্ষের সহযোগিতায় ই-কমার্স সেক্টরের পেশা মান নির্ধারণ
৭। টিসিবি’র সহযোগিতায় সাশ্রয়ীমূল্যে বিভিন্ন পণ্য অনলাইনে বিক্রি করা
৮। জরুরী প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশন এর সাথে মিলে নিত্যপণ্য প্রবাহ ঠিক রাখা।
৯। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় রমযানে মাছ মাংস দুধ ডিমের দাম ঠিক রাখতে কাজ করা
১০। আইসিটি ডিভিশনের সাথে মিলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
১২। বিআরটিএ তে মোটর বাইকে ১৬ বাই ১৬ ইঞ্চি সাইজের বক্স সংযোজনের আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে।
অন্যান্য লেখায় বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এই ব্লগ থেকে খুজে নিতে পারেন।
আমি এখানে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরব যা অন্যান্য লেখায় নেই।
ক্রেতাবেশী প্রতারকদের দ্বারা ই-কমার্স উদ্যোক্তারা যেভাবে প্রতারণার শিকার হয়।
মাসে ২/১টা ঘটনা এরকম ঘটে। তবে এটাকে আমরা বলি না যে, ক্রেতারা প্রতারণা করেছে। কারণ একজন প্রকৃত ক্রেতা কখনো এমনটা করতে পারেন না। তাহলে ই-কমার্স ব্যবসা চলতে পারতনা। এটা মূলত ক্রেতা সেজে এক ধরনের দূস্কৃতিকারীরা এমন করে। যেমন,
১. মোটর সাইকেল আরোহী ডেলিভারীম্যানদের ফলো করে। মোটর সাইকেল রেখে পণ্য ডেলিভারী দিতে ঘরে প্রবেশ করলে এদিক দিয়ে বাইকটি মুহূর্তেই চুরি হয়ে যায়।
২. পণ্যটি বুঝে পাওয়ার পর চেক করার কথা বলে বাসার ভেতরে নিয়ে, ডেলিভারী ম্যানের সামনে না খুলে রুমে খুলে। তারপর সেখানে নষ্ট পুরনো মাল দিয়ে বলে যে, আমি যা অর্ডার করেছি তা দেয়া হয়নি। আমার টাকা ফেরত চাই।
৩. ডেলিভারী ম্যান যখন ডেলিভারী করবে। শেষ মুহুর্তে ফোন করে বলা হয় আমিতো বাসায় নেই আমি একটু বাইরে। দেখা গেল পাশে একটা এলাকার নাম বলা হয়। তারপর সেখানে নিয়ে চুরি ছিনতাই হাইজ্যাক এর মতো ঘটনা ঘটে।
আমি যখন ডেলিভারী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং করিয়েছিলাম। তখন ডেলিভারীম্যানদের কাছে এমন অভিজ্ঞতার গল্প শুনেছি।
৪. এমনও ঘটনা শুনেছি, ডেলিভারীম্যানের ব্যাগে ইয়াবা দিয়ে এলাকার বখাটে মাস্তানেরা পুলিশ কেসের ভয় দেখিয়ে আটকে রেখে ডেলিভারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করেছে।
৫. ঢাকা শহরের কয়েকটি এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। ডেলিভারী প্রতিষ্ঠানগুলো এসব এলাকাকে রেডজোন বলে থাকে।
কি কি প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে যেতে হয় একেকজন অনলাইন উদ্যোক্তাকে?
বাংলাদেশে একজন উদ্যোক্তা যখন ব্যবসা শুরু করে। প্রথমে সে পরিবার থেকে বাঁধার মুখে পড়ে। যেহেতু ব্যবসায়ে অনেক ঝুঁকি আছে এবং প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে যেতে আপনজনেরা বাঁধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ায়।
দ্বিতীয়ত যে সমস্যা সেটা হলো, বিনিয়োগ সংকট। আমাদের দেশে বিনিয়োগকারী যেমন পাওয়া যায়না তেমনি পাওয়া যায়না ব্যাংকের লোন। শর্ত পূরণ করে ব্যাংকঋণ পাওয়া এটা সোনার হরিণের চেয়েও বেশীকিছু। তাছাড়া অল্পকিছু সিডফান্ড আছে দেশে কিন্তু আমাদের দেশে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সে দক্ষতা নেই যেটা দিয়ে একটি সুন্দর বিজনেস প্রোফাইল ও লাভের প্রত্যাশা দিয়ে বিনিয়োগ বা ঋণ পেতে পারে। এ বিষয়টা শেখানোর জন্য সরকারী বা বেসরকারী অলাভজনক সংস্থাগুলোর যেমনি এগিয়ে আসা দরকার তেমনি সহজ শর্তে ঋণ দানের জন্য এগিয়ে আসা দরকার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও।
উদ্যোক্তরা মূল প্রোডাক্ট কিনতে গিয়ে আসল পণ্যের জায়গায় নকল বা মানহীন পণ্য পেয়েছে কিনা?
এমনটা হচ্ছে। বিভিন্ন ব্রান্ডের পণ্যের নকল রয়েছে বাজারে। এক্ষেত্রে আসলে কিছু করার থাকেনা। তবে যারা নিয়মিত সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য কিনেন তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা কম হয়। বিশেষ করে হোমমেড পন্যের ক্ষেত্রে ভেজাল পণ্য এবং আমদানীকৃত ননব্রান্ড ছোটখাটো ডিভাইসের ক্ষেত্রে অহরহ নকল পন্যের দেখা মেলে।
কিছুদিন একটি আইটি প্রতিষ্ঠান যারা সফটওয়ার ব্যবসা করে। আমাদের জানায় যে, ই-ক্যাবের একটি সদস্য প্রতিষ্ঠান তাদের লোগো নকল করে ডায়বেটিস টেস্ট এর মেশিন বানিয়ে বিক্রি করছে। পরে দেখা গেল বিক্রেতা উক্ত আইটি ফার্মকে চেনেন না। তিনি মূলত একজন আমদানীকারকের কাছ থেকে পণ্যটি কিনে অনলাইনে বিক্রি করছেন। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের বড়ো একটা আইটি ব্রান্ডের নামে তাদের হবহু লোগো দিয়ে অন্য কেউ পণ্যটি চায়না থেকে তৈরী করে এনেছে।
এই ব্যবসায় এসে নিঃ স্ব হয়েছেন এমন সংখ্যা কেমন?
এখানে ঝরেপড়ার হার নির্ণয় করা খুব কঠিন। যেহেতু অনেকে বাসা থেকে ব্যবসা করে অনেকে আবার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে তাই কাকে নিঃস্ব ধরবো বোঝা কঠিন। তবে ২০ ভাগ পর্যন্ত সাময়িকভাবে এবং ৭% স্থায়ীভাবে ঝরে যায়। এখানে অনেকে কম পুঁজিতে ব্যবসা করে বলে সেভাবে নিঃস্ব হওয়ার হার কম। তবে তাদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয় যারা তল্পিতল্পা গুটিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। করোনার শুরুতে যখন ই-ক্যাব থেকে মানবসেবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তখন দেখা গেছে বহু নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিশেষ করে যারা বুটিক ও পোশাক নিয়ে কাজ করতে তারা পথে বসে গেছে। অনেকে হাত পেতেছে কিছু সাহায্য পাওয়ার জন্য। এটা ছিল খুব বেদনাদায়ক। এই সমস্যার সমাধানে সরকারের কাছে উদ্যোক্তা ডেটাবেজ থাকা দরকার এবং বিপদের সময়ে সময়মতো তাদের পাশে থাকা দরকার।
অনেকে মনে করেন করোনাকালীন সময়ে ই-কমার্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আসলে এই প্রবৃদ্ধি সবার ক্ষেত্রে সমান হয়নি। অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন বিশেষ করে যারা টিকে থাকতে পারেন নি। কারণ খাদ্য আর নিত্যপণ্য বিক্রি বেড়েছে গ্যাজেট বা পোশাক নয়। অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর অনেকেই ঘুরে দাড়িয়েছে। যারা প্রথম ৩ মাস খরচ পুষিয়ে টিকে থাকতে পারেনি তাদের আর ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি।
অনেকে মনে করেন বর্তমানে অসম প্রতিযোগিতা এবং অস্বাভাবিক অফারের কারণে ইন্ডাস্ট্রিতে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। তাই সবাই তাকিয়ে আছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আসন্ন ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নীতিমালার দিকে।
২০১৮ সালের ডিজিটাল কমার্স নীতিমালার একটি ধারা অনুসারে, ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশনা প্রনয়নের দায়িত্ব রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে। গেল বছর নভেম্বরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে। উক্ত কমিটি চলতি বছরের মার্চ মাসে একটি খসড়া নীতিমালা প্রনয়ন করেছে। এবং তা সরকারী ও বেসরকারী অংশীজনদের কাছে মতামতের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। সরকারী সংশ্লিষ্ঠ দপ্তর ২১ মার্চের মধ্যে মতামত দিয়েছে। ই-ক্যাব ২৯ মার্চে মতামত সংকলিত আকারে পেশ করার কথা রয়েছে।
এটি বাস্তবায়িত হলে ক্রেতারা সুরক্ষার দিক থেকে কয়েকধাপ এগিয়ে যাবে। তবে উদ্যোক্তাদের সুরক্ষার জন্য এখনো বড়ো ধরনের কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
বিশেষ করে এখনো যেখানে ট্রেড লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে ই-কমার্স সংযুক্ত করা হয়নি। সেখানে সোস্যাল মিডিয়া কমার্স উদ্যোক্তাদের অঙ্গীভূত করা এবং সহজ ট্রেড লাইসেন্স ব্যবস্থাপনা চালু করার জন্য অপেক্ষা আর তদ্বির ছাড়া আর কিছু করার নেই। জেনে রাখা ভাল, গত বছরের ২ ফ্রেব্রুয়ারী ট্রেড লাইসেন্স এ্যাক্ট ২০১৬ সংশোধনের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে ই-ক্যাবের প্রস্তাবনা ও তার স্বপক্ষে যৌক্তিকতা চাওয়া হলেও এখনো এ ব্যাপারে কোনো পরিপত্র জারি করেনি মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে গত ১৫ মার্চ সংশ্লিষ্ঠদের সাথে এক মত বিনিময় সভা করে স্ক্র সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাপারে ১২ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। Escrow হচ্ছে এমন একটি থার্ড প্লাটফর্ম যাতে অনলাইন ক্রেতার পণ্য বিক্রয় সংক্রান্ত টাকা জমা থাকে। এই টাকা ৭ দিন পর বিক্রেতার কাছে যাবে যদি ক্রেতা কোনো অভিযোগ না করেন। আর যদি অভিযোগ করেন তাহলে টাকা স্ক্রতে জমা থাকবে। টাকা পেতে হলে বিক্রেতাকে ক্রেতার অভিযোগের সমাধান করে তারপর টাকা পেতে পারবে। আশা করা যাচ্ছে এই সেবা চালু হলে সমস্যা অনেকাংশেই কমে আসবে।
এদিকে প্রাইভেট সেক্টর ডেভলপমেন্ট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ই-ক্যাবের সদস্যদের জন্য বৈদেশিক মূদ্রার ব্যয়ের ক্ষেত্রে একটি সীমা ঠিক করে দিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। বিগত বেশকিছু মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মূদ্রানীতি বিভাগে বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। ই-ক্যাব থেকে ২ দফা এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেয়ার পর কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া ডিজিটাল কমার্স পলিসি, আইসিটি পলিসি, ভ্যাট ও ট্যাক্স সংক্রান্ত পর্যালোচনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মূদ্রানীতিসহ বিভিন্নক্ষেত্রে ই-ক্যাব প্রস্তাবনা পেশ করেছে। সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আইসিটি ডিভিশন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়সহ আইসিটি, শী ট্রেডস, এফএনএফ এর সাথে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে ই-ক্যাব। বর্তমানে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ, আইসিটি ডিভিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাংলাদেশ ব্যাংক, চিনিও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলসহ বিভিন্ন দপ্তরে ই-কমার্সের উন্নয়নে ই-ক্যাব পেশ করেছে নানাবিদ প্রস্তাবনা।
ই-ক্যাব একশন প্লান
গত ৩০ জানুয়ারী ‘‘ই-ক্যাব একশন প্লান ২০২১’’ এর মাধ্যমে অন্যান্য বিষয়ের সাথে চলতি বছর ৪টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করার ঘোষনা দেয়া হয়। যেমন- ক্রস বর্ডার ই-কমার্স, রুরাল ই-কমার্স, ফেসবুক কমার্সের অন্তভূক্তি ও অভিযোগ ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন।
পরিবহন ও মোটর বাইক সমস্যা
রাস্তায় বক্সযুক্ত মোটরবাইক চালনায় খুব জটিল সমস্যার মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিনিয়ত মামলা সামলাতে গিয়ে বাইকপ্রতি মাসে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। এই বিষয়ে বিআরটিএতে ১৬/১৬/১৬ সাইজের বক্স সংযোজনের অনুমতি চায় ই-ক্যাব। গত ১ মার্চ ই-ক্যাবের একটি প্রতিনিধি দল এই বিষয়ে বৈঠক করে বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সাথে। কিন্তু এই দাবী আদৌ কবে বাস্তবায়ন হবে কেউ জানি না।
সুষম প্রতিযোগিতা
সুষম প্রতিযোগিতা, ক্ষুদ্র টিকে থাকা ও বাজারে যাতে মনোপলি না হয় সেজন্য প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতি জোর দিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান আলোচিত বৃহৎ কয়টা প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতিযোগিতা কমিশনে অভিযোগ করেছে। কমিশন এই বিষয়ে কয়েকটা গনশুনানীও করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে শোনা যায়নি।
অভিযোগ
সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশের মানুষ সচেতন নয়। কারণ তারা ফেসবুক পেইজ দেখে কোম্পানী সম্পর্কে খোজ খবর না নিয়ে পণ্য কিনে থাকেন। এমনকি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেইজে শত শত নেগেটিভ রিভিউ কমেন্ট দেখেও মানুষ কমদামে পাওয়ার জন্য পণ্য অর্ডার করে থাকে। পরে এই লোকগুলো একইভাবে ই-ক্যাবের গ্রুপেও কমেন্ট আর ইনবক্স করতে থাকে। যদি তিনি প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন, তিনি ক্ষতিপূরনসহ টাকা ফেরত পাবেন শুধু ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ দায়ের করলেই পারেন।
যদিও আমাদের কাছে আমাদের কোনো সদস্য প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ক্রেতা অভিযোগ করলে সেটা আমরা সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। খুব জটিল না হলে আমাদের কাছে আসা অর্ধেকের বেশী অভিযোগ আমরা সমাধান করি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ক্রেতাদের মধ্যে ১ হাজারে ১ জনও সঠিকভাবে অভিযোগ করেন না। যেমন আমাদের ওয়েবসাইটে একটি অভিযোগ ফর্ম থাকা সত্বেও বেশীরভাগ ক্রেতা ফেসবুকে অভিযোগ করেন। এবং তাতেও তারা শুধু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন অথচ একটি সমস্যা সমাধানের জন্য যে তথ্য দরকার সেটা দেন না। যেমন ধরেন অর্ডার দেয়ার তারিখ, অর্ডার নাম্বার, মূল অভিযোগ এবং ক্রেতার মোবাইল নাম্বার এসব বিস্তারিত থাকে না। ফলে অনেকসময় চাইলেও বহু সমস্যার সমাধান করা যায়না। আবার অনেকে সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানকে সমস্যা সমাধানের সুযোগ না দিয়েও অভিযোগ করে বসেন। বিশেষ করে মার্কেটপ্লেস এর ক্ষেত্রে দেখা যায়, কখনো সরাসরি সরবরাহকারীরা ক্রেতার কাছে পণ্যটি পাঠিয়ে দেন এবং মার্কেটপ্লেস কতৃপক্ষ বিষয়টি জানে না। তাই আগে তাদেরকে জানানো উচিৎ।
8,201 total views, 3 views today