
বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে ই-ক্যাবের গৃহিত পদক্ষেপ
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানী নিয়ে ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ই-ক্যাবের গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে সদস্যসহ সকলকে অবহিত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের কোনো সেক্টরেই প্রতারণা নতুন ঘটনা নয়। ই-কমার্সের ক্ষেত্রেও এটা পুরনো। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ই-ক্যাব এ ধরনের অভিযোগ পেয়ে আসছে এবং যখনি কোনো সদস্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে ই-ক্যাব তা সমাধান করেছে। বিগত বছরসমূহে ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের হাজার হাজার অভিযোগ ই-ক্যাব সমাধান করেছে। কোন প্রতিষ্ঠান কত টাকা লেনদেন করছে তাদের ব্যাংকে কত টাকার লেনদেন হচ্ছে এটা কোনো ট্রেড এসোসিয়েশন জানে না বা জানতে পারে না। তাই ই-ক্যাব ক্রেতা, সদস্য কিংবা সরবরাহকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সেগুলো সমাধানের কাজ করেছে।
তবে সাম্প্রতিককালে এসব অভিযোগ ছাড়িয়ে যাওয়াতে তা সকলের দৃষ্টিগোচর হয়েছে এবং এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। কিন্তু শুরু থেকে ই-ক্যাব এসব ব্যাপারে সচেতন থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। যেগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো।
১। ২০১৪ সালে ই-ক্যাব গঠনের মূল লক্ষ্যই ছিল। ই-কমার্স খাতের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা। পারষ্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। নীতি পলিসি তৈরীতে সরকারকে সহযোগিতা করা। এবং সরকারের কাছে দাবী দাওয়া উপস্থাপন করা। এটাই একটা ট্রেড এসোসিয়েশন এর কাজ। সে কাজ ই-ক্যাব নিয়মিত করে যাচ্ছে।
২। ২০১৫/১৬ সালে ডেলিভারী কোম্পানীগুলোর সাথে লেনদেন নিয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা লেগে থাকতো। যারা তখন ই-ক্যাবের সাথে ছিলেন তাদের মনে থাকার কথা। ই-ক্যাব উভয়পক্ষকে একসাথে বসিয়ে দিনের পর দিন ধরে শত শত সমস্যার সমাধান করেছে
৩। ২০১৮ সালে সরকারের যে ডিজিটাল কমার্স পলিসি সেখানে ‘‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’’ ই-ক্যাবের প্রস্তাবে সংযোজন করার প্রস্তাবি দিয়েছিল।
৪। ডিজিটাল কমার্স পলিসিতে এসক্রো এর মাধ্যমে ক্রেতা ভোক্তা আর্থিক নিরাপত্তার জন্য এসক্রো প্রস্তাবও ই-ক্যাব দিয়েছিল। কারণ তখনো সময়মতো ডেলিভারী না দেয়া, টাকা ফেরত না পাওয়া নিয়ে অল্প স্বল্প অভিযোগ আসতো। তবে হয়তো তার পরিমাণ অনেক কম ছিল।
৫। ডিজিটাল কমার্স পলিসিতে ডিজিটাল কমার্স সেল গঠন করার প্রস্তাব রয়েছে। এবং তিনটি বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন কমিটি করার প্রস্তাব রয়েছে। ১) বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিয়ে কারিগরি কমিটি, ২) বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উপদেষ্ঠা কমিটি ৩) আর্থিক ঝুঁকি চিহ্নিত করার জন্য রিস্ক ফ্যাক্টর ম্যানেজমেন্ট কমিটি। এসব বিষয়েও ই-ক্যাব মতামত প্রদান করেছে। ইতোমধ্যে উপদেষ্ঠা কমিটি গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
৬। ২০২০ সালে ই-ক্যাবে সবচেয়ে বেশী অভিযোগ এসেছে যে ৪টি কোম্পানীর নামে তাদের প্রত্যেককে সেবার মান উন্নয়ন এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য চিঠি দেয়। এবং তাদের কর্তাব্যক্তিদের সাথে ই-ক্যাব সহ-সভাপতি আলাদা আলাদা বৈঠক করে তাদেরকে এই ব্যাপারে সতর্ক করা হয়।
৭। সরকার ভোক্তার অধিকার রক্ষার জন্য সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গঠন করেছে। তারা ভোক্তাদের কাছে প্রায় ৭৫% অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে পেরেছে বলে ই-ক্যাবকে দেয়া তালিকা থেকে জানা যায়। যেসব প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ বেশী বা যাদের নিষ্পত্তির হার কম তাদেরকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এবং তাদেরকে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রাখা হয়েছে।
৮। ই-ক্যাব তার সদস্য কোম্পানীর নামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে জমা হওয়া অভিযোগের তালিকা নেয়। কোন কোম্পানীর কতটা অভিযোগ হয়েছে এবং যাদের নামে বেশী অভিযোগ হয়েছে তাদেরকে এজন্য নোটিশ করেছে এবং দ্রুত সমাধানের নির্দেশনা দিয়েছে। যে ২৫% অভিযোগ সমাধান হয়নি সেগুলো সম্পর্কে ক্রমাগত নোটিশ পাঠিয়ে অনেক অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে ই-ক্যাব ভূমিকা রেখেছে।
৯। ই-ক্যাব বিভিন্ন সময়ে ক্রেতাদের সচেতন করে পোস্ট দিয়েছে এবং যেসব প্রতিষ্ঠানের রিভিউ ভাল নয় তাদের থেকে কেনাকাটা না করা সংক্রান্ত পোস্টও দিয়েছে। এবং আরো বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে যাতে সেগুলো মেনে চলার মাধ্যমে ক্রেতারা প্রতারণসা থেকে বাঁচতে পারেন।
১০। গতবছর একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে ই-ক্যাব ৭ সদস্যের একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। সে কমিটির রিপোর্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিযোগিতা কমিশিনসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরকে সরবরাহ করেছে।
১১। ই-ক্যাব সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া অনেক কঠিন করেছে। কিছু প্রতিষ্ঠান সদস্য হওয়ার সময় তাদের ব্যবসা পদ্ধতি গোপন রেখে ওয়েবসাইট ডিজাইন করেছে। পরে তাদের মধ্যে যাদেরকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। বা যাদের নামে অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদেরকে অভিযুক্ত হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। অনেকের সদস্য রিনিউ করা হচ্ছে না। ২টি প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। বাকীদের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে এর মধ্যে সমাধান না হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
১২। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যাশ অন ডেলিভারী সংক্রান্ত নতুন একাউন্ট চালু করার বিষয়েও সভায় যোগদান করে ই-ক্যাব পরামর্শ দিয়েছে। যাতে ই-কমার্স ও ডেলিভারী কোম্পানীর মাঝে লেনদেন সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা না হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে একটি সার্কুলার দিয়েছে।
১৩। গতবছর বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন একটি তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল যে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কারণে বাজারে সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা। ই-ক্যাব প্রতিযোগিতা কমিশনকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেছে।
১৪। ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১ প্রণয়ন, চূড়ান্তকরণ ও ঘোষনার জন্য ই-ক্যাব আভ্যন্তরীণ ও সরকারের সাথে অসংখ্য মিটিং করেছে। তিনবার এই বিষয়ে চিঠি ও প্রস্তাবনা দিয়েছে। এতে করে বিভিন্ন কোম্পানী যা খুশি তা করার রাস্তা বন্ধ হয়েছে।
১৫। এসক্রো সেবা বাস্তবায়ন নিয়ে ই-ক্যাব বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটিতে প্রতিনিধি নিয়োগ করেছে। ই-ক্যাব নিজেও একটি কমিটি গঠন করেছে। এবং এই বিষয়ে সকলের মতামতের ভিত্তিকে চূড়ান্ত প্রস্তাব প্রদান করবে।
১৬। নীতিমালা প্রকাশের ১ মাসের মধ্যে নীতিমালার বিভিন্ন ধারা ও ভিত্তিতে ১৬টি সদস্য প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকাভূক্ত করে। অভিযোগগুলো হলো- এমএলএম, অর্থ আত্মসাৎ, পণ্য ডেলিভারী না দেয়া, নীতিমালা না মানা, ভোক্তা অধিকারে আসা অভিযোগের নিষ্পত্তি না করা এবং ই-ক্যাবে আসা অভিযোগসমূহের নিষ্পত্তি না করা। ১৬টি কোম্পানীর মধ্যে ৪টি কোম্পানীর সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। ২টি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ মৃদু ও ১ টি প্রতিষ্ঠান সমস্যার দ্রুত সমাধান করেছে তাই তারা ব্যতিত ৯টি কোম্পানীর বিরুদ্ধে ২য় পর্যবেক্ষণ ও দফা চলছে। কেউ জবাবদিহিতার বাইরে নয়। তাদের অভিযোগের মাত্রা ও নিষ্পত্তির হার এবং তথ্য দিয়ে সহযোগিতা ও নির্দেশিকা প্রতিপালনের বিষয় দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এটা মনে রাখা উচিৎ। ই-ক্যাব কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা না। ই-ক্যাব কারো ব্যবসা, বন্ধ বা চালু করতে পারে না। ই-ক্যাব কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করতে পারে না। ই-ক্যাব সমঝোতার উদ্যোগ নিতে পারে। ই-ক্যাব একটা সমিতি মাত্র কোনো রেগুলেটরী বডি নয়। এবং যেসব কোম্পানীর নামে অভিযোগ রয়েছে তারা সকলে ই-ক্যাবের সদস্য নয়। এমনকি ই-ক্যাব কারো সদস্যবাদ বাতিল বা স্থগিত করলেও তার ব্যবসা বন্ধ হবে না। বরং ই-ক্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যাদের নামে অভিযোগ রয়েছে তাদের মাধ্যমে হাজারো ভোক্তার সমস্যার সমাধানে ই-ক্যাব ভূমিকা রেখেছে, তাদেরকে সঠিক ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে এবং সরকার ই-ক্যাবের কাছ থেকে সেসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য চাইলে ই-ক্যাব সব তথ্য দিতে বাধ্য। যাতে সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। বিশেষ করে যেহেতু প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক বিবরণী ই-ক্যাবের জানার সুযোগ নেই। সেহেতু এ সংক্রান্ত বিষয়ে নজরদারী করাও ই-ক্যাবের পক্ষে সম্ভব নয়।
এমতাবস্থায়, ই-কমার্সখাতের সমস্যা সমাধানে সকলকে একযোগে কাজ করা উচিৎ। ই-ক্যাব সবার সহযোগিতা চায়। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেও ই-ক্যাব পিছপা হবে না। ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং যেসব প্রতিষ্ঠান সঠিক নিয়মে ব্যবসা পরিচালনা করে তাদের পাশে থাকতে ই-ক্যাব, সরকার ও মিডিয়াসহ সকলকে আহবান জানায়।
সকলকে ধন্যবাদ
5,712 total views, 2 views today