আমাদের দেশে অনলাইন শপিং সাইট গুলোর জন্য ভিজিটর আনা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ভিজিটর আনাকে আমরা সবাই গুরুত্বের সঙ্গে দেখি কারণ লোক না আসলে কেনার প্রশ্ন আসবে না। এজন্য ফেইসবুক খুব গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আমি নিজে ফেইসবুক বিশেষজ্ঞ নই তবে ই-ক্যাবের প্রচার প্রসারে ফেইসবুকের অনেক অবদান রয়েছে। আমার কাছে এক ডলার বাজেটও ছিলনা ই-ক্যাব থেকে। এজন্য আমি রাতের পর রাত সময় দিয়েছি আমাদের ই-ক্যাবের ফেইসবুক গ্রুপে। যতটুকু সফলতা পেয়েছি তাতে আমি খুশী। যাই হোক নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু টিপস দিচ্ছি আপনাদের জন্য এখানে।
ছবি সুত্রঃ http://www.smallbusinesssem.com/wp-content/uploads/2012/09/manta-facebook.jpg
১। ফেইসবুককে গুরুত্বের চোখে দেখুন। সময় দিন ফেইসবুক কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে। আপনার সাইটের জন্য একটি পেইজ খুলে আপনার কাজ শেষ তা মনে করবেন না। বরং এ নিয়ে পড়ুন এবং জানুন। ফেইসবুক নিজেই এ দিকে কিছু টিপস দিয়ে রেখেছে এখানেঃ https://www.facebook.com/business/overview
বেশীরভাগ পেইজে দেখি পন্যের ছবি, দাম এবং কিছু বর্ণনা। এর দরকার রয়েছে কিন্তু আমার মনে হয় তার থেকেও বেশি দরকার আপনার ভিজিটরদের নিয়ে চিন্তা করা। পারলে পরিচিত ৫০-৬০ জনের মত নিন যে এ ধরনের পেইজ থেকে তারা কি পেতে চায়।
২। ফেইক লাইকের পেছনে ছুটবেন না। ১০০০ টাকায় ১০০০ লাইক কেনার মত বোকামি করতে যাবেন না। আমি জানি অনেকেই এ ব্যপারে আমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবেন। আপনার পেইজে হয়তো ১ লাখ লাইক আছে কিন্তু কোন পোস্টে ৫-৬ জন লাইক দেয়। তাহলে আপনার ১ লক্ষ লাইক আসলেই মূল্যহীন।
৩। বিজ্ঞাপন দিন বুঝে শুনে। ফেইসবুকে বিজ্ঞাপন নিজে না দিয়ে অভিজ্ঞ কারো মাধ্যমে দেবার পক্ষপাতী তবে বিজ্ঞাপন নিয়ে একটু জানার চেষ্টা করুন। এ নিয়ে একটু পড়ে দেখুন ইন্টারনেটে, ইউটিউবে কিছু ভিডিও দেখুন। পোস্ট বুস্ট ভাল জিনিস কিন্তু বিক্রি না বাড়লে হতাশা বাড়বে। ফেইসবুক বিজ্ঞাপন আসলে সায়েন্স নয় যে দুইয়ে দুইয়ে চার হবে বরং আর্টস।
৪। গ্রুপকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করুন। আমাদের ই-ক্যাবের ফেইসবুক গ্রুপের ঠিকানাঃ https://www.facebook.com/groups/eeCAB/ মাত্র ৩১২১ জন সদস্য সেখানে। কিন্তু এত কাজের গ্রুপ বাংলাদেশে খুব কমই আছে। ই-কমার্স নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্নের উত্তর সেখানে সুন্দর করে পাওয়া যায়। এর ফলে আমাদের ই-ক্যাবের অনেক প্রচার হচ্ছে। অনেকেই গ্রুপের পোস্ট গুলোর পড়ে ই-ক্যাবে সদস্য হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমার মনে হয় যে প্রতিটি অনলাইন শপিং সাইটের একটি করে গ্রুপ থাকা উচিত। সেই গ্রুপে হাজার হাজার লোকের দরকার নেই। মাত্র ১০০০ জন থাকলেও যদি কাজের আলোচনা হয় তবে সেই গ্রুপ থেকে অনেক সুবিধা পাবেন।
৫। গ্রুপে নিজের পন্যের সরাসরি বিজ্ঞাপন না দিয়ে বরং টিপস দেবার চেষ্টা করুন। ধরা যাক আপনার অনলাইন শপিং সাইটে আপনি মূলত পোশাক বিক্রি করেন। সেক্ষেত্রে আপনি ফ্যাশন সম্পর্কিত পোস্ট দিতে পারেন এবং এ নিয়ে প্রশ্ন উত্তর দিতে পারেন। দেখবেন অনেকেই চলে আসবে এ গ্রুপে। তখন মাঝে মধ্যে আপনার পন্যের কথা বললে কেউ কিছু মনে করবে না বরং আপনার ওয়েবসাইটের কথা অন্যদের জানাবে। আমি আসলে গ্রুপের মাধ্যমে সরাসরি পন্য বিক্রি না করে বরং ওয়েবসাইটের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য বলবো।
৬। গ্রুপের সদস্যদের নিয়ে ইভেন্ট করলে দারুন হবে। ইভেন্ট বলতে আমি ফর্মাল কোন কিছু বুঝাচ্ছি না। বরং গ্রুপের কয়েকজন মিলে ধানমন্ডি লেক বা টিএসসির মত জনপ্রিয় জায়গাতে একসাথে খাওয়া ও আড্ডা হতে পারে। এতে করে আপনার ওয়েবসাইটের প্রচার অনেক বাড়বে আবার তেমন কোন খরচ হবে না।
৭। শর্ট কাট খুব একটা সুফল বয়ে আনেনা এই সহজ কথাটি মাথায় রাখলে ভাল হবে। আমি নিজেই ই-ক্যাব গ্রুপে দেখেছি যে দিনে ২০-২৫ জন করে বেড়ে প্রতি মাসে ৭০০-৮০০ জন সদস্য যোগ দিচ্ছেন। যত সদস্য বাড়ছে তত গ্রুপে লাইক ও কমেন্ট এর পরিমান বাড়ছে। গ্রুপে আমার বাইরে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০ মাসের মধ্যে মানে ২০১৫ সালের মধ্যে ই-ক্যাবে অনেক কোম্পানি যোগ দেবে, গ্রুপে অন্তত ১০-১৫ হাজার লোক থাকবে এবং ই-ক্যাব অত্যন্ত জনপ্রিয় সংগঠনে পরিনত হবে।
৮। আপনার পেইজ বা গ্রুপ কিন্তু আপনার এবং অন্য যারা এখানে পোস্ট, লাইক বা কমেন্ট দিচ্ছেন তারা আপনার ওয়েবসাইটকে ভালবেসে দিচ্ছেন। তাই তাদের সন্মানের চোখে দেখার চেষ্টা করুন সব সময়। কিভাবে তাদের আরও বেশি সেবা দেয়া যায় তা নিয়ে ভাবুন। তাহলে তারা আপনার কোম্পানি, ওয়েবসাইট ও পন্যের পাবলিসিটি দেবে নিজে থেকে।
৮। নিজের ওয়াল হতে পারে আপনার জন্য বিক্রির খনি। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে ১৫৬০ জনের মত রয়েছে। অন্তত ১০০০ জন ই-কমার্স এর কারণে আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তাই আমি ই-ক্যাব ও ই-কমার্স নিয়ে পোস্ট দিলে অনেকে জানেন। আপনিও চেষ্টা করুন ৫০০০ লোকের সঙ্গে যুক্ত হতে এবং মাঝে মধ্যে আপনার পন্যের কথা তুলে ধরুন, আপনার ওয়েবসাইটের কথা উল্লেখ করুন। আমার ফ্রেন্ড লিস্টে অনেকে ই-কমার্স নিয়ে আমার কাছে জানতে চায় প্রায় প্রতিদিন। ঠিক তেমনি দেখবেন অনেকে আপনার কাছে আপনার পন্য সম্পর্কে জানতে চাইবে। ফ্রেন্ড লিস্টে যারা রয়েছে তারা কিছু কিনতে চাইলে ডিস্কাউন্ট দিতে পারেন কারণ তারা আপনাকে চেনে এবং হয়তো নিয়মিত ক্রেতা হতে পারে।
শেষ কথাঃ এ লেখা পড়ে অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন যে আপনার আমার মত এত সময় নেই বা ই-ক্যাবতো অ্যাসোসিয়েশান, কোন কোম্পানি নয়। কোম্পানির সবচেয়ে বড় সম্পদ হল সুনাম এবং ফেইসবুকের মাধ্যেম সুনাম বৃদ্ধি সম্ভব। অন্তত আমি তাই দেখেছি আমাদের ই-ক্যাবে। আর আপনার যদি মার্কেটিং এর জন্য যথেষ্ট টাকা থাকে তাহলে আমার কোন টিপস নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই, তবে যদি টাকা না থাকে তবে একটু চিন্তা করতে পারেন।
17,595 total views, 2 views today