কিভাবে বিজনেস কনসেপ্ট ডেভলপ করবেন???
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
. ব্যবসা করার জন্য অথবা ব্যবসায়ে সফল হওয়ার জন্য বিজনেস কনসেপ্ট এর গুরুত্ব কতটা। এটা একটা আলোচনা ও অনধাবন সাপেক্ষ বিষয়। প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করি ব্যবসা শুরু করার জন্য কি কি প্রয়োজন? যেমন: ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা, প্রয়োজনীয় আর্থিক পুঁজি, উপযুক্ত পরিবেশ, দরকার ক্ষেত্রে একটা সুন্দর অফিস, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কমী বাহিনী আর ব্যবসায়ের নাম, ঠিকানা, উদ্দেশ্য, প্রচারণা, লাইসেন্স, সাইনবোর্ড এসব তো থাকবেই। এখন প্রশ্ন হলো এইসব কিছু থাকা সত্বেও কি ব্যবসা ব্যর্থ হতে পারে। সহজ উত্তর হলো লোকসান হতে পারে এবং হচ্চে। সোনা ব্যবসায়ীও পথে বসছে আবার গোবরের ঘুটে বেচেও দিন বদলে যাচ্ছে। তাহলে মূল কথা হচ্ছে সফলতার মূল মন্ত্র কি? পরিশ্রম, অধ্যাপবসায়, আন্তরিকতা, সততা, মানসম্মতা ইত্যাতি বিষয়তো রয়েছেই। সেগুলো ব্যবসার শুরু করার করার প্রয়োজন হয় কিন্তু ব্যবসার শুরু করার আগে থেকে চালু অবস্থায় যে জিনিসটা দরকার সেটা হলো বিজনেস কনসেপ্ট।
তাহলে বিজনেস কনসেপ্ট জিনিসটা কি? আমি কোন শাস্ত্রীয় কিংবা অভিধানিক আলোচনায় না গিয়ে বলতে চাই। ব্যবসা বোজাটা হচ্ছে বিজনেস কনসেপ্ট। কেউ চারুকলার ছাত্র হয়ে ভালো ব্যবসায়ী হলেন কেউ ব্যবসায় শিক্ষায় সবোচ্চ্ ডিগ্রি নিয়ে নিজের একটা ব্যবসা দাড় করাতে পারলেন না। এ অবস্থায় বিজনেস কনসেপ্ট এর অন্তভুক্ক বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা যাক।
প্রতিটি আইডিয়া বা ধারণা কমপক্ষে ৩-৫টা তথ্যেও উপর নির্ভরশীল। আপনাকে নতুন আইডিয়া সৃস্টিও জন্য যেমনি সৃজনশীল মনোভাব থাকতে হবে তেমনি প্রচুর তথ্য জানা থাকতে হবে। একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করা যাক: মনে করুন আপনি সিদ্ধান্ত ই কমার্সেও আওতায় অনলাইনে জুতা বিক্রি করবেন। আমি নিশ্চিত এই আইডিয়া জেনারেট করার জন্য নিচের ৫টি তথ্য আপনাকে সাহায্য করেছে।
০১. অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জুতার ছবি দিয়ে নেটে বা ফোনে অর্ডার নেয়া সম্ভব।
০২. যেকোনো একটা উপায়ে দাম পরিশোধ নিশ্চিত করা যাবে।
০৩. বিভিন্ন ফ্যাকটরী আউটলেট বা মুচি থেকে জুতা সংগ্রহ করা তেমন কঠিন কিছু নয়।
০৪. কুরিয়ার বা ডাক যোগে জুতা পাঠানো যাবে। এটা কাচের মাল নয়যে ভাঙ্গার আশংকা থাকবে।
০৫. দেশে যে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে, তাতে অনলাইন শপিং জমে উঠবে।
সূতরাং বিজনেস কনসেপ্ট উন্নয়নের প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে বেশী বেশী জানা।
যে যত বেশী জানবে তার বিজনেস কনসেপ্ট ততটা বাস্তবসম্মত হবে। এজন্য আরো যেসব বিষয় জানা দরকার বা ব্যবসা শুরু আগে যে বিষয়গুলো ভালো বোঝা দরকার-
০১. কি ব্যবসা করবেন, কোন পন্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন?
০২. কতটাকা বিনিয়োগ করবেন, কোথায় মোকাম স্থাপন করবেন?
০৩. নিজে কতটুকু অংশগ্রহণ করবেন? কাদেরকে সঙগে নেবেন?
০৪. কোথা থেকে পন্য আনবেন, কিভাবে পন্য আনবেন? কত খরচ হবে?
০৫. কতটাকা লাভ করবেন? কোনখাতে কতটাকা খরচ করবেন? বিক্রয়মূল্য কত হবে?
০৬. বাজারে আপনার পন্য বা সেবার চাহিদা কতটুকু কতজন মানুষ দিনে, সপ্তাহে, মাসে, বছরে পন্যটি কতবার ব্যবহার করবে।
০৭. আপনার এলকা কতটুকু, সে এলাকার লোকসংখ্যা কত? কত শতাংশ লোক আপনার পন্য কিনতে সামর্থবান, এবং কত শতাংশ লোক মানষিক ভাবে প্রস্তুত।
০৮. পন্যটি ব্যবক্তিগত হলে কতজন মানুষের এটি দরকার হয়? পারিবারিক হলে কতটি পরিবারকে সেবা দিতে পারবেন? সামাজিক হলে এর প্রকৃত চাহিদা কত তা বোঝা দরকার?
০৯. পন্যটির সংবাদ আপনি ক্রেতার কাছে কিভাবে পৌছাবেন? এবং পন্যটি গ্রাহক কিভাবে সংগ্রহ করবে?
১০. এরকম আর কি কি পন্য বা প্রতিযোগী বাজারে আছে। তাদের পন্যগুলো বাজাওে কত শতাংশ চাহিদা পূরণ করে আর আপনি কত শতাংশ বাজার ধরতে চান?
১১. আপনার পন্যটি নতুন হলে যদি এর বাজার তৈরী করতে হয় সেক্ষেত্রে আপনি কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন?
১২. বাজারে সমজাতীয় পন্যগুলোর কি কি ভালো দিক রয়েছে? কি কি সমস্যা রয়েছে? কেন আপনার পন্যটি অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা বা উন্নত অথবা কেন লোকে অন্যটির বদলে আপনারটি ব্যবহার করবে।
১৩. আপনার পন্যটি ব্যবহার না করে বিকল্প বা পরিপূরক কি পন্য ব্যবহার করা যায়, তার দাম ও মান সম্পর্কে ঁেঘাজখবর রাখুন?
১৪. আর কোন কোন পন্যের বিকল্প হিসেবে আপনার পন্য চলবে , তাও জেনে নিন?
উপরের বিষয়গুলো ভালোভাবে জানা বিজনেস কনসেপ্ট এর অংশ। আপনার ব্যবসা ভালো সূচনা এসব জানা এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারার উপর নির্ভরশীল।
কেউ ডাক্তারী বিদ্যা পড়েও ভালো ব্যবসায়ী কেউ বিদেশী এমবিএ ডিগ্রি নিয়েও ফেইল তাহলে বিজনেস কনসেপ্ট জিনিসটা কোথায় পাওয়া যায়? তাহলে তথ্যই এর প্রধান সূত্র। এবার আসি ব্যবসা শুরুর পর যেসব বিষয় জানা দরকার? যা বিজনেস কনসেপ্ট এর অংশ।
ব্যবসা চলাকালীন
আগের লেখাটিতে ব্যবসা শুরুর আগে কিভাবে বিজনেস কনসেপ্ট পরিষ্কার কওে ব্যবসা শুরু করা যায় সে বিষয়ে আলোকপাত করেছিলাম। আসলে প্রতিটা বিষয়ে বেশী জানলে ভালো। কিন্তু জানার বা শেখার জন্য আবার হাত পা গুটিয়ে বসে থাকাও চলেনা । নূনতম একটা ধারণা নিয়ে ব্যবসা শুরু করা যায়। আপনি অনেক জানেন এবং কম জানেন দুটো ক্ষেত্রেই কিন্তু সর্তকতার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং অন্যের সাথে পরামর্শ করার প্রয়োজন পড়ে। আর একটা বিষয় হলো আপনি যতই জানেন না কেন, বাজারে সব সময় নতুন নতুন ঘটনা ঘটে চলেছে, নতুন পন্য ও পন্যাভ্যাস তৈরী হচ্ছে। পুরনো পন্য ও পন্যাভ্যাস হারিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আপনাকে সবসময় আপডেট থাকতে হবে। এবং আপনার ব্যবসা বা পেশা পন্য হোক বা সেবা হোক তাকেও আপডেট করে নিতে হবে। এজন্য ব্যবসার শুরুতে যেমন অনেক কিছু জানা বা খোজখবর নেয়া দরকার।
তেমনি ব্যবসা চলমান অবস্থায়ও বাজার সম্পর্কে সচেতন হয় নতুন পন্য বা আনা অথবা পুরনো পন্য বা সেবাকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের দেশে সবচে জলন্ত উদাহরণ হচ্ছে। গত ২০ বছর ধরে তাদের ফেয়ার এন্ড লাভলী রং ফর্সাকারী ক্রিম বাজারে শীর্ষে রয়েছে। তবুও প্রতি বছর তারা একে নতুন নতুন ঢং ও উপাদানে বাজারে নিয়ে আসছে। ফলে তাদের এক নম্বর আসনটি অটুট রয়েছে এবং দিনে দিনে পাকা হচ্ছে। তাদের অন্য পন্যের ক্ষেত্রে কথাটি সত্য। সূতরাং বাজারে আপনার পন্যের চাহিদা ভালো সেজন্য চুপ করে থাকার কোনো মানে নেই।
ঠিক বিপরীত একটি উদাহরণ দেই। মিল্লাত প্রিকটি হিট বা ঘামাচি পাউডার আমি গত ১৫ বছর ধরে ব্যবহার করি, সে স্কুল লাইফ থেকে। আমার ঘাম একটু বেশী হয়। কিন্তু ঘামাচি হয়না বললেও চলে। জীবনে ২/১ বার হয়তো হয়েছে। এজন্য আসলে আমাকে কোনো ঘামাচি পাউডার ব্যবহার করতে হয়না। তবুও আমি এটা ব্যবহার সারা বছর। বিশেষ করে বগল এবং উরুতে। রেকসোনার চেয়ে এটাকে আমার বেটার মনে হয় গরমের দিনের জন্য। রেকসোনাও ব্যবহার করে দেখিছি। এবং অনেকে ঘামাচি হওয়ার পর আমার কাছ থেকে এটা নিয়ে ব্যবহার করেছে। রাতে মেখেছে, সকালে ঘামাচি মরে গেছে। এরকম ভালো একটি পন্য বাজার হারাচ্ছে। প্রচার ও নতুনভাবে পরিবেশনা না করার কারনে। তবে আমার দেখে অন্তত ২০ জন এটা ব্যবহার করা শুরু করেছে।
সূতরাং ব্যবসার শুরুতে যে জিনিস গুলো আপনার জানা দরকার ব্যবসার চলাকালীন সে বিষয়গুলো আপনার জানা থাকতে হবে। যাতে আপনি আপনার পন্য বা সেবাকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করতে পারেন। আর এই কাজটি আপনি তখনি খুব ভালোভাবে করতে পারবেন যখন আপনি আপনার পন্যের বিস্তারিত জানতে পারবেন। ব্যবসা শুরু করার জন্য অনেক ব্যবসায়িক নলেজ দরকার না হলেও টিকে থাকার জন্য তা প্রয়োজন। এখানে আপনি প্রতিদিন কিছু না কিছু শিখবেন। প্রতিটা পন্যেে ডিটেইল জানা আপনার জন্য ফলদায়ী হবে। যেমন একটি পন্যের, উৎপাদন, উৎপাদক, উৎপাদকের পাপ্য, দূরত্ব, অঞ্ছল, এবং প্রতিটা বিষয়ের বিকল্প চিন্তাও মাথায় রাখতে হবে। জানা থাকা লাগবে পন্যটি র‘ থেকে শুরু করে ভোক্তার নিকট পৌছা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে।
আগামী মাস আগামী বছর আমনকি আগামি ১০ বছর পর পন্যটির বাজার কি হবে। প্রযুক্তিগত কি পরিবর্তন হতে পারে। এবং আপনার সাম্ভাব্য করনীয় কি হবে। তার একটা আবছা রেখা আপনার মাথায় থাকলে আপনি অন্যদেও চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।
এবং আপনার পন্য বা সেবার ক্ষেত্রে উন্নত দেশে কি প্রক্রিয়া চলছে আপনি কতটা পিছিয়ে আছেন। বাংলাদেশে সে প্রযু্িক্ত কতটা উপযোগী কবে নাগাদ আসতে পারে। তার সুবিধা অসুবিধা সমূহ খেয়াল রাখুন। এসব ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়ার সময় সর্তর্ক হোন। বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেল এর কথা আমি জানি। যা বর্তমানে সরকারী হস্তক্ষেপে বন্ধ রয়েছে। তারা এমন লেটেস্ট যন্ত্রপাতি আমদাণী করছে পরে দেখা গেল সে যন্ত্র অপারেট করার মতো দ্ক্ষ জনবল দেশে নেই। সূতরাং আপনি তথ্য রাখবেন কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে বিচক্ষণ হবেন।
বিকল্পভাবে উপস্থাপনের পাশাপাশি বিকল্প পন্যের কথাও মাথায় রাখবেন। ২/৩শ বছর আগে যদ্ধের তলোয়ার বানাতো এমন একটা কোম্পানী যুগের হাওয়া বদল হলে তারা সরকারী মূদ্রা বানানোর ব্যবসা শুরু করে। বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের নোট ছাপার ব্যবসা জমে উঠে। সে কোম্পানীটাই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশী মূদ্রা ছাপার কাজ পায়।
এখন আপনার পন্যের বিভিন্নরকম উপস্থাপনা কি হবে? অথবা পন্যটি ভোক্তাদের দৈনিন্দিন অভ্যাস থেকে বাদ পড়ে গেলে আপনার ব্যবসা কি হবে? অথবা সমজাতীয় পন্য বাজার দখলে নিতে চাইলে আপনার কৌশল কি হবে। এসব কিছুই নির্ভর করছে আপনার বিজনেস কনসেপ্ট এর উপর। আর আপনার বিজনেস কনসেপ্ট নির্ভও করবে আপনার কাছে থাকা তথ্যের উপর।
10,315 total views, 2 views today