
করোনার প্রথম ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্থ ই-কমার্স
এই সময়ে যখন করোনা সংক্রান্ত কারণে জীবন ও অর্থনীতি সংকুচিত। তখন ই-কমার্স উদ্যোক্তারা এক মারাত্বক সংকটে রয়েছে। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর জরিপে সার্বিক যে চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে এই খাতে উদ্যোক্তারা চরম বিপদগ্রস্থ রয়েছে। যদিও এই খাতের মাত্র ৮ শতাংশ উদ্যোক্তা যাদের নিত্যপণ্য ও ঔষধ রয়েছে তারা তারা ব্যতিত বাকী ৯২ শতাংশ উদ্যেক্তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে আছে। এবং বেশীরভাগ উদ্যোক্তার ঝরে পড়ার আশংকা তৈরী হয়েছে। তবুও ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে ২৪০ কোটি টাকা সরকারের কাছে অনুদান হিসেবে চাওয়া হয়েছে তা কেবল তাদের কর্মীদের বেতন ও অফিসভাড়ার ৫০ শতাংশ। অফিস ভাড়া ও বেতন মিলিয়ে ৪৮০ কোটি টাকার বিশাল চাপের মধ্যে রয়েছে ই-ক্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া পহেলা বৈশাখ বিশাল বাজার হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। সত্যিকার অর্থে যে ক্ষতি কখনো পূরণ হবার নয়। কেন এবং কি বাবদ এই সহায়তা চাওয়া হয়েছে তা নিন্মে তুলে ধরা হলো।
কর্মীদের বেতন:
ই-কমার্স খুব দ্রুত বিকাশমান হলেও এখনো এই সেক্টর লাভের মুখ দেখেনি। তাই যেসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেন আংশিক এবং পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। তাদের লেনদেন বন্ধ থাকা মানে সার্বিকভাবে ব্যবসায় লাভ না হলেও একক মূল্য হিসেবে যে লাভ আসে। যা থেকে এসব কোম্পানীর নৈমিত্তিক খরচের একটা অংশ সংকুলান করা হয় তা পুরোই বন্ধ রয়েছে। তাই কর্মচারী সংখ্যা ২ জন থাকুক আর ২০ জন থাকুক। এদেরকে নিয়ে সংকটে রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এই অবস্থায় তাদের বেতন না দিলে কর্মীদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাঁচাতে বেতন দেয়ার জন্য সরকারী অনুদান জরুরী হয়ে পড়েছে।
অফিসভাড়া:
অফিসভাড়া এমন একটি খরচ ব্যবসা হোক আর না হোকমাস শেষে এই খরচটা দিতে হয়। যেহেতু ঘরভাড়া মওকুপের কোনো ঘোষনা আসেনি। সেজন্য এটা একটা বাধ্যতামূলক খরচ। প্রতিটি উদ্যোক্তাকে অফিসভাড়া বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হচ্ছে। তাই এই সহযোগিতা এখন অতীব জরুরী। অফিস ভাড়া দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো চালু না রাখলে ব্যবসা বা উদ্যোগগুলো শেষ হয়ে যেতে পারে।
নববর্ষ ও ঈদের বিশেষ বাজার:
অনলাইন উদ্যোক্তাদের বছরের অন্যতম ব্যবসার সুযোগ হলো পহেলা বৈশাখ ও ঈদ উপলক্ষ্যে ফ্যাশন পণ্যসহ অন্যান্য পন্য বিক্রি করে বছরজুড়ে টিকে থাকে। ই-কমার্স সাইটগুলোতে সবচেয়ে বেশী বিক্রি হয় ফ্যাশনওয়ার এবং গেজেট। দুটো আইটেম সবচেয়ে ভাল বিক্রি হয় ঈদ এবং পহেলা বৈশাখে। কিন্তু এবারের করোনা সংক্রান্ত কারণে এই ব্যবসা ১০০ ভাগ বন্ধ রয়েছে। ফলে ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে যে দাবী করা হয়েছে তা নুন্যতম দাবী। এটা শুধু এই খাতের উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখার জন্য অক্সিজেন এর মতো।
ইনভেন্টরী প্রোডাক্ট স্টক:
জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের এবারের পহেলা বৈশাখ হওয়ার কথা ছিল ভিন্নরকম আমেজের। সে প্রেক্ষিতে বেশকিছু উদ্যোক্তা ফ্যাশনওয়ারসহ বিভিন্ন পন্যের সমাহার ঘটিয়েছেন। তারা কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মধ্যে পড়বেন। একদিকে তারা সরবরাহকারীর অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবেন অন্যদিকে পন্যগুলো বিক্রি করা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের এই পন্যের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে যাবে। কিছু অংশ পুরনো হয়ে যাবে কিছুর পন্যের আবার মডেল পুরনো হয়ে গেলে বাজারে দাম থাকবেনা। এগুলোর জন্য অনেকে ওয়ারহাউজের ভাড়া টানবেন।
এছাড়া যখনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তখন কিন্তু ব্যবসা রাতারাতি আগের জায়গায় ফিরে আসবেনা। বস্তুত তাদেরকে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। শুধু আর্থিকভাবে নতুন করে করতে হবে তা নয়। বরং ব্যবসাটাই বলতে গেলে নতুন করে শুরু করতে হবে। ১ বছর কিংবা ৫ বছর যতদিনই হোকনা কেন উদ্যোক্তারা এই সময় পেরিয়ে তাদের ব্যবসাকে একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। তাদেরকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে।
ই-কমার্স খাতে বর্তমান প্রবৃদ্ধি ২৫%। ক্রস বর্ডার ই-কমার্সের মাধ্যমে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের বৈদেশিক মূদ্রা অর্জিত হয় বছরে ১০০ কোটি টাকা। যার প্রবৃদ্ধি ৭৪%। বর্তমানে ই-ক্যাবের সদস্য সংখ্যা ১১০০। এখাতে কর্মসংস্থান রয়েছে একলক্ষ ৩০ হাজার লোকের যাদের ২৬% নারী। এখাতের অর্থব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়লে বিশাল জনশক্তি তাদের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলবে। সব বিবেচনায় এই সময়ের জন্য ২৪০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা ও ৬শ কোটি ঋণ চাওয়া হয়েছে, তা যেন অবশ্যই ১ বছরের গ্রেসপ্রিয়ড দিয়ে এবং ২% সুদে দেয়া হয়।
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
1,745 total views, 3 views today