
করোনার ১ বছরে ই-কমার্স সেক্টর
ই-ক্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠান ১৫শ। তবে ২ হাজারের বেশী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ছোট বড় মিলিয়ে। এরমধ্যে কিছু প্রচলিত ব্যবসায়ের অনলাইন শপও রয়েছে। তবে ফেসবুক ভিত্তিক প্রায় ২ লক্ষ পেইজ রয়েছে। এরমধ্যে অল্পকিছু ছাড়া বাকীগুলোকে আমরা ননফর্মাল বিজনেস বলি। কারণ তাদের অনেকের ট্রেড লাইসেন্স নেই।
গতবছর পেন্ডামিকের শুরুতে দেখা গেছে যেসব নারী উদ্যোক্তা ক্লথিং নিয়ে কাজ করতেন। শুরু দিকে তাদের ৮-১০% চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে আবার অন্য ব্যবসায় গিয়েছেন। গত বছর ই-কমার্সের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫০% এর মতো এই বছর প্রথম ৬ মাসে ৩০% গ্রোথ হয়েছে। কিন্তু নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে তা সমানতালে হয়নি। ২০২১এ ই-কমার্সে হয়তো ২০-২৫% নতুন নারী উদ্যোক্তা এসেছে। এ বছর আরো অনেকে যুক্ত হয়েছেন। সর্বসাকুল্যে ৪০-৫০% প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটা হলো সংখ্যার দিক থেকে। তবে বিক্রির দিক থেকে বিশেষ করে যারা খাদ্যপণ্য, রান্নাকরা খাবার বিক্রি করেন তাদের ব্যবসা ২০০% পর্যন্ত বেড়েছে। কেউ কেউ ভাল রান্না করতে পারতেন। আগে কখনো ভাবেননি। নিজের রান্না করা খাবার বিক্রি করবেন। তারা নতুন করে শুরু করে বেশ ভাল সাড়া পাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে অন্তত ১০ হাজার নারী তাদের রান্না করা খাবার বিক্রি করেন। এই তথ্যগুলো কোনো গবেষনা ও জরিপ তথ্য নয়। এগুলোর কোনো ডেটাবেজ আমাদের কাছে নেই। কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিস, ফেসবুক রেসপন্স এবং কিছু ইভেন্ট এর সাড়া থেকে এটা আমাদের একটা ধারণাকৃত মূল্যায়ন।
অনলাইন ব্যবসায় বিভিন্ন ধরনের ক্যাটাগরি রয়েছে। প্রথম সরাসরি অনলাইন ব্যবসায় এবং অনলাইন সহযোগী ব্যবসা। এছাড়া পণ্যভিত্তিক ও সেবা ভিত্তিক ব্যবসা রয়েছে। অফিসিয়ালী আমরা ই-কমার্সকে যেসব ভাগে বিভক্ত করি সেগুলো হলো বিটুসি, বিটুবি, জিটুসি ইত্যাদি। অপারেশনাল দিক থেকে ই-কমার্স মুলত ২ ধরনের যেমন সাধারণ অনলাইন শপ। যেখানে বিক্রেতা নিজের পণ্য বিক্রি করে থাকে। এছাড়া রয়েছে অনলাইন মার্কেটপ্লেস রয়েছে। যাতে মূলত একটি প্লাটফর্মে অনেক ব্রান্ড বা মার্চেন্ট থাকে।
ই-ক্যাব তাদেরর মেম্বারদেরকে তাদের সেবাও পণ্যের ধরণ অনুসারে ২০টির মতো ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা যায়। চেষ্টা করছি। যেমন অনলাইন শপ, অনলাইন রিটেইলার, মার্কেটপ্লেস, অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে, ই-লজিস্টিক, ই-টূরিজম, ই-ফার্মাসী ইত্যাদি।
বাংলাদেশে বিগত দিনগুলোতে প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫% করোনাকালীন এটা প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখের কাছাকাছি ডেলিভারী হয়। এরমধ্যে নিত্যপন্যের লেনদেন বেড়ে ৩শগুণ। সেবার মানও অনেক বেড়েছে। আগে যদি শতকরা ৬টাতে সমস্যা হতো এখন সেটা ৪টাতে নেমে এসেছে। কিন্তু সর্বোপরী বিক্রি বাড়ার কারণে সমস্যার পরিমাণ বেড়েছে। বিশেষ করে সময়মতো ডেলিভারী না পাওয়া। তবে দিন দিন ডেলিভারী সেবার মান উন্নত হচ্ছে। ক্রেতাদের সাড়াই প্রমাণ করে এখানে তাদের আস্থা বাড়ছে।
বিদেশী বিনিয়োগকৃত কোম্পানীগুলো ভাল করছে। তারা বেশী সংখ্যক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে সংযুক্ত করতে পেরেছে। এর পাশাপাশি দেশীয় উদ্যোক্তারা দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য অনলাইনে নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে বাইক, ফ্রিজ এর মতো পণ্য অনলাইন বিক্রির একটা চর্চা শুরু হয়েছে। এটা ইতিবাচক দিক। কারণ এতে ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে।
সর্বশেষ আমরা গত ঈদে যে হিসেবটা পেয়েছি। সেটা হলো ঈদকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫শ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। রমযান মাসে সব মিলিয়ে ২ হাজার কোটি টাকার অনলাইন বাণিজ্য হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।
এখানে নির্ভরযোগ্য তথ্যে অভাব রয়েছে। প্রথমত এই সেক্টরের অনেকে সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে নিবন্ধন ছাড়াই ব্যবসা করছে। আবার অনেকে অন্য নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে। তাই চিহ্নিত করা কঠিন যে আসলে এই সেক্টরে কতজন উদ্যোক্তা রয়েছে। আমাদের ধারণা গত ১ বছরে এই খাতে ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এবং এই মুহুর্তে ৩ লক্ষ লোক এতে কাজ করে উদ্যোক্তা ও কর্মী হিসেবে।
কিন্তু অনলাইনে যতোই প্রসার দেখা যায় না কেন। মাত্র ৩% লোক অনলাইনে কেনাকাটা করে। আমরা মনে করি এই মুহর্তে ২০% মানুষের অনলাইনে কেনাকাটা করার সুযোগ রয়েছে।
যে সমস্যাগুলোর জন্য কাংখিত বিকাশ হচ্ছে না। সেটা হলো ট্রেড হিসেবে এখনো সরকার একে স্বীকৃতি দেয়নি। কারণ ট্রেড লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে এখনো ‘‘ডিজিটাল কমার্স’’ যুক্ত হয়নি।
গ্রামীণ পর্যায়ে এখনো পণ্য ডেলিভারীতে নানা সমস্যা দেখা যায়। এই খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ ও বিনিয়োগ পায়না। ফলে সম্ভাবনা থাকা সত্বেও এই বিকাশ হচ্ছে না। বিশেষ করে ক্রস বর্ডার ই-কমার্স যেটাকে আমরা রপ্তানীমুখী ই-কমার্স বলি সেটার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৭৪%। কিন্তু এখানেও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে।
লেখা : জাহাঙ্গীর আলম শোভন
3,717 total views, 3 views today