করোনাকালীণ সময়ে ই-কমার্স সেক্টরের কর্মকান্ড ও আর্থিক বিভিন্ন দিক
২৫ মার্চ ২০২০ সাধারণ ছুটি শুরু হলে সরকারী দপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে নিত্যপণ্য, খাবার ও ঔষধসেবা চালু রাখার জন্য ১৭০টি সদস্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে ই-ক্যাব। প্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত চলাচলের মধ্যে ৫ হাজার পরিবহন এবং ৫ হাজার ডেলিভারী পার্সনকে সচল রেখে দৈনিক প্রায় ৪ হাজার ডেলিভারী দেয়। মে মাসে ফুড ডেলিভারী সেবা, ইলেকট্রিক, বই ও ফ্যাশন পণ্য অনলাইনে বিক্রয় ও সরবরাহের অনুমতি মেলে। প্রথমে ডেলিভারীম্যান সংকট থাকায় সমস্যা দেখো দিলেও পরবর্তীতে ফ্রিজ, এসি, ফ্যান, ল্যাপটপের মতো পণ্য বাসায় ডেলিভারী দেয়া শুরু করে। এই সময় তৈরী খাবার ডেলিভারী সেবায় নতুন ১০,০০০ ডেলিভারী যুক্ত হয়। ঢাকার দুটো লকডাউন এলাকায় ৭০টি প্রতিষ্ঠান সেবা দিয়েছে এক লাখের বেশী মানুষকে। দিয়েছে জরুরী মানবিক সহায়তা। আম মৌসুমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ১ লাখ ৫২ হাজার কেজী ক্যামিমেলমুক্ত আম সরবরাহ করে। জুলাই মাসে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর সহযোগিতায় অনলাইনে পশুর হাট এর আয়োজন করে ই-ক্যাব। যাতে সবচেয়ে বেশী বিক্রি হয় গ্রামীণ ও প্রান্তিক কৃষকের গরু। পশু বিক্রির পাশাপাশি ডিজিটাল হাটে পশু জবাই করে বাসায় ডেলিভারী সেবাও দেয়া হয় ঢাকা শহরের মধ্যে। সারাদেশে ঈদ উপলক্ষ্যে পর্যন্ত ২৭ হাজার কুরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ৩০ টাকায় ১০ হাজার কেজী টিসিবি’র পেয়াজ বিক্রি করছে ই-ক্যাব সদস্য প্রতিষ্ঠান। ফলে পেঁয়াজের বাজার গতবছরের মতো লাগামহীনভাবে বাড়ার সুযোগ পায়নি।
ই-কমার্সের স্বাভাবিক্র প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো সরকার নীতি ও কর্মসূচী ভিত্তিক কিছু সিদ্ধান্ত।
প্রথমত- ইন্টারনেট সেবার ব্যাপ্তি এবং কমদামে ইন্টারনেট সেবা দেয়া। সরকারের বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ এর কারণে ইন্টারনেটের দাম যেমনি কমেছে তেমনি সেবার পরিধিও বেড়েছে। যা ই-কমার্সকে প্রবৃদ্ধি দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত- বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ অবকাঠামো। একদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে লোডশেডিং এখন অনেক কমে গেছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও উন্নত যোগাযোগ ই-কমার্সকে করেছে প্রসারিত।
তৃতীয়ত: পেমেন্ট সিস্টেম। অনলাইন পেমেন্ট, অনলাইন ব্যাংকিং এবং এমএফএস সেবার বিকাশ ই-কমার্স লেনদেনকে সহজ ও নিরাপদ করে দিয়েছে। ক্যাশ অন ডেলিভারী সুবিধা থাকায় ক্রেতারা ভরসা করতে পেরেছে। এখন ধীরে ধীরে অনলাইন পেমেন্ট এর চর্চা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া প্রতিটি মুহুর্তে সকলের দাবী উঠার আগে ই-ক্যাব বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ই-ক্যাবের আবেদনে দ্রুত সাড়া দিয়েছে সরকার। কোনোপ্রকার বাড়তি দাম না বাড়িয়ে নিজেরা ঝুঁকি নিয়ে এবং নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা করে সর্বোচ্চমানের সেবা দিয়েছে ই-ক্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে তারা মানুষের আস্থা অর্জন করে ই-কমার্সকে নিয়ে গেছেন নতুন এক উচ্চতায়। যার সুফল ভোগ করবে গোটা জাতি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার ডেলিভারী হচ্ছে যেগুলোর মূল্য হিসেব করলে মাসিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫.৪ মিলিয়ন ডলার।
* ই-কমার্সের এই উন্নতির বহুবিধ সুফল রয়েছে। বাংলাদেশে কোনো দূর্যোগ বা অযুহাত পেলে অসাধু ব্যবসায়ীরা পন্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু অনলাইনে যখন জিনিস পন্যের মূল্য প্রকাশিত হয় তখন মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সেটা প্রভাব পড়ে। * মানুষ অনেক বেশী ঘরে বসে সেবা পেয়েছে বলে ঘর থেকে বের হতে হয়নি তার আরো বেশী করোনা সংক্রমণ থেকে নগরবাসী রক্ষা পেয়েছে। * ২ ঘন্টার বাজার অনলাইনে ৫ মিনিটে সম্ভব তাই মানুষের কর্মঘন্টা বাড়ছে। * গ্রামের অনেক পণ্য শহরে আসছে। গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য যা ইতিবাচক দিক। * ঘরে বসে ছাত্ররা, গৃহিনীরা বেকার যুবকেরা নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান খুঁজে নিচ্ছে। * ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পাশাপাশি জন্ম হচ্ছে সহজ, পাঠাও, চালডাল এর মতো বৃহৎ দেশীয় প্রতিষ্ঠানের।
1,858 total views, 2 views today