ই-ক্যাব ও বাংলাদেশের ই-কমার্স
ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ
প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্বপ্ন জাগিয়ে এবং সফল কার্যক্রমের মাধ্যমে ই-ক্যাবের পথচলা তরুনদের আশাব্যঞ্জক এবং দেশের জন্য সফলতার এক নতুন স্বাক্ষর।
বিশেষ করে গত ৮ মাসে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ই-ক্যাব যেভাবে সাড়া দিয়েছে। একের পর এক দায়িত্ব সফল বাস্তবায়ন করেছে এজন্য টিম ই-ক্যাব প্রশংসার যোগ্যতো বটেই, দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির সচল করার লাইফ লাইনে পরিণত হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির শুরুতে ডেলিভারি কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় আলাদা গাইডলাইন তৈরি করা, তাদের স্বাস্থ্য পরার্শ দেয়া, ফোনে চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং সরকারের অনুমতি নিয়ে জরুরী সেবা চালু রাখার মাধ্যমে ই-ক্যাব নিজেদের দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিয়েছে।
এরপর একে একে প্রতিটি পরিস্থিতির সাথে তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে একটির পর একটি কাজ করেছে। রমযানে রেস্টুরেন্ট ফুড বাসায় ডেলিভারী দেয়ার অনুমতির মাধ্যমে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষ ঘরে বসে তৈরী খাবার সেবা পেয়েছে।
ঈদের কেনাকাটায় ঘরেবসে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার করেছে লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিদিন এই পরিমাণ মানুষ যদি শপিং মলে যেত নিশ্চই পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো।
যখন আমের মৌসুম এলো। আমচাষী, বিষমুক্ত আমের গ্রাহক এবং অনলাইন সবাই উপকৃত হলো একটি মাত্র উদ্যোগের মাধ্যমে। “আম মেলা, ই-বাণিজ্যে সারাবেলা” যার মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রায় ১,৫২,০০০ কেজি আম ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ করে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানসমূহ।
ঢাকার ২টি লকডাউন এলাকায় প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রতিদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য পৌছে দেয়ার যে কর্মযজ্ঞ, লক্ষাধিক মানুষকে মানসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করার যে চ্যালেঞ্জ তারা মোকাবিলা তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ ব্যাপারে তাদেরকে আইসিটি ডিভিশন, এটুআই সার্বিক সহযোগিতা করেছে।
সফলতার একটা মাইলফলক ছিল। ডিজিটাল কুরবানি হাট। আমি নিজে এখান থেকে গরু ক্রয় করেছি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং ই-ক্যাবের যৌথ উদ্যোগে “ডিজিটাল হাট” এর মাধ্যমে শতাধিক ই-কমার্স সাড়ে ৮ হাজার এবং দেশজুগে অনলাইনে প্রায় ২৭ হাজার পশু বিক্রি তথ্য জানা গেছে। এবং সাড়ে ৪শ গরু জবাই করে মানুষের বাসায় সঠিক সময়ে মাংশ পৌঁছে দেয়ার যে কাজটি করেছে শুধু ধন্যবাদ তার জন্য যথেষ্ঠ নয়।
একটা কাজ হয়তো না করলেও পারত। সেটা মানবসেবা কার্যক্রম। তাদের এতো ব্যস্ততার মাঝেও সদস্য কোম্পানী অনুদান সংগ্রহ করে সারাদেশে ১ হাজার পরিবারের ৫ হাজার মানুষকে খাদ্যসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়েছে।
সর্বশেষ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় মাত্র ১৮ থেকে ৩৬ টাকায় অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে ই-ক্যাব। এবং আমি যতটা জেনেছি অনলাইন পেয়াজ বিক্রি শুরু করার সাথে সাথে কেজীপ্রতি বাজারে পেয়াজের দাম কমে যায় ২০ টাকা। এবং পেয়াজের দাম সামান্য বাড়লেও গতবারের মতো বাড়েনি এই কারণে। এখনো আরো একটু কমেছে। ই-ক্যাবকে সরকার যেভাবে সাড়া দিয়েছে প্রতিটি কাজে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের এই দায়িত্বশীলতার কথা আমাদেরকে স্বীকার করতেই হবে।
কোভিডের সবচেয়ে বড়ো সাফল্য হলো, ই-কমার্সের প্রতি জনগনের আস্থা প্রতিষ্ঠা। আগামী ৫ বছরের কাজ ১ বছরে করেছে ই-ক্যাব এবং এর সদস্যরা। মানুষও সেই প্রতিদান দিয়েছে। মিডিয়ার তথ্য মোতাবেক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো ৩গুন বড়ো হয়েছে মানে ৩০০% প্রবৃদ্ধি যেখানে ই-কমার্স সেক্টরে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫%। বিশেষ করে চালডাল এর উন্নতি তো আমাদের সবার চোখে পড়ছে। ঢাকার ঘরে ঘরে চালডাল।
ই-কুরিয়ার বেশকিছু লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানও বেশ বড় হয়েছে। অনেকে তাদের কর্মীদের বাস ভাড়া করে গ্রাম থেকে এনেছে। একজায়গায় রাখার ব্যবস্থা করেছে। তারপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গৃহে থাকা মানুষকে ঘরে গিয়ে সেবা দিয়ে এসেছে। তাদের এইযে একাগ্রতা এবং আন্তরিকতা সেজন্য ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জন করেছে এবং সরকারও বিষয়টি অবগত রয়েছে।
লকডাউন এলাকায় সেবাদেয়াকে কেন্দ্র করে যাচাই ডটকম, সবজিবাজারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো খুব দ্রুত উঠে এসেছে। বিশেষ করে যাচাই সাম্প্রতিক সেবার মাধ্যমেই সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছে। স্বপ্নের অনলাইন সেল বেড়েছে দ্বিগুন, অ্যাগোরা এবং মীনাবাজারও অনলাইন সেল শুরু করেছে।
শুধু নিত্যপণ্য নয়, ওয়ালটনের ফ্রিজ, এসির মতো পণ্যও মানুষ অনলাইনে ক্রয় করেছে। সেবা ও ঔষধ যেগুলো অনলাইনে বিক্রির হার ছিল নগন্য। এসব পণ্য আগের দ্বিগুন বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে।
তথ্যমতে, শুধুমাত্র নিত্যপণ্যে ৮ মাসে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা, বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ডেলিভারী হচ্ছে প্রতিদিন, ৫০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান, ৫ হাজার তরুদের প্রশিক্ষণ, ১৬ হাজার কোটি টাকার সার্বিক ডিজিটাল লেনদেন এর মাধ্যমে ৬০ লাখ মানুষকে সেবা প্রদান। এসব তথ্য ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্য আশা জাগানিয়া।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব ও বাস্তবায়নে ই-ক্যাব কাজ করলেও প্রযুক্তির সুবিধা এবং সরকারের সার্বিক সহযোগিতার হাত না থাকলে এগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না অথবা কাংখিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতো না। আমি জানি সরকারের প্রতিটি দপ্তর দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাড়া দিয়েছে। ডেকে নিয়ে কাজ করতে বলেছে। যেখানে যে ধরনের সহযোগিতা দরকার তা দিয়েছে।
আজ সেজন্যই আমরা করোনা পরিস্থিতির মতো বিষয়ে যেখানে বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতির ধরাশায়ী সেখানে বাংলাদেশ সফলতা দেখাচ্ছে। আমাদের পার ক্যাপিটা ডিজিপি এবং পাকিস্তান ও ভারতের চেয়ে এগিয়ে। করোনার জন্য কোনো মানুষ না খেয়ে মরেনি। যারা শুরু দিকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারাও ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে করোনাকালীন সেবা দিয়েছে এবং আজকের ই-কমার্স মুভার্স এ্যাওয়ার্ড পেয়েছে সরকারী ও বেসরকারী সেক্টরের ১২ জন অগ্রণী কর্মী যারা ই-ক্যাবের সাথে সম্পৃক্ত থেকে করোনাকালীন ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন দেশ, সরকার ও দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
এই মুহুর্তে ই-ক্যাবের ই-জিনিয়াস প্রকল্পের মাধ্যমে ই-ক্যাব তাদের দিগন্তকে প্রতিনিয়ত প্রসারিত করে চলেছে এটা হলো তার আরেকটি দৃষ্টান্ত। ৮ মাস ঘরে বসে কোনোরকম সহশিক্ষা কার্যক্রম থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত। তাদের সহশিক্ষা কার্যক্রম প্রযুক্তির ব্যবহার দ্বারা ঘরে বসে করা, প্রতিভা বিকাশের সুযোগ ও মূল্যায়ন সম্ভবত এটাই প্রথম। বিভিন্নভাবে সবসময় হয়ে থাকে কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে এই কর্মসূচীর বাস্তবায়ন ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ডিজিটাল প্রজন্ম তৈরীতে সহায়ক হবে।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম শোভন
5,487 total views, 5 views today