ই-ক্যাবের সদস্যদের অনূকুলে ব্যবসায়িক ব্যয় নির্বাহের নিমিত্তে বৈদেশিক মূদ্রার ব্যয়সীমা
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
প্রাইভেট সেক্টর কো-অডিনেশন কমিটির ১৩তম সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক নীতি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুষ্ঠিত ২৫/০২/২০২০ তারিখের সভার আলোচ্য বিষয় ২(ঘ) অনুসারে ই-ক্যাবের যে দাবী ছিল তার ব্যাখ্যা ও যৌক্তিকতা তুলে ধরা হলো।
সভার আলোচ্য সূচী থেকে:
এফই সার্কুলার ০২/০২০২, তারিখ ১৩/০১/২০২০ বেসিসের সদস্যভূক্ত আইটি ও সফটওয়ার ফার্মসমূহ আর্ন্তজাতিক কার্ডের মাধ্যমে যৌক্তিক ব্যবসায়িক ব্যয় নির্বাহের নিমিত্তে বার্ষিক মা.ড. ৪০,০০০ (সীমার মধ্যে) কোটা সুবিধা ভোগ করছে। ই-ক্যাবের সদস্যদের অনূকুলে এইরুপ কোটাসুবিধা প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
ই-ক্যাবের প্রস্তাব:
আন্তর্জাতিক ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে ই-কমার্স উদ্যোক্তা তথা ই-ক্যাব সদস্য কোম্পানীসমূহের জন্য বার্ষিক ব্যয়সীমা ৫০,০০০ মার্কিন ডলার এবং একবারে এই ব্যয় ৩,০০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করার অনুরোধ করা হলো। উক্ত প্রস্তাব গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকে পেশ করে ই-ক্যাব
প্রস্তাবের যৌক্তিকতা:
১. অনলাইন বিজ্ঞাপন: অন্যান্য ব্যবসায়িরা বিলবোর্ড, পেপার এড, টিভি এড, পোস্টার লিফলেট ইত্যাদি ভিত্তিক প্রচুর বিজ্ঞাপন দিলেও অনলাইন উদ্যোক্তাদের মূলত সিংহভাগ বিজ্ঞাপন অনলাইনে দিতে হয়। কারণ তাদের গ্রাহকেরা মূলত নেটিজেন। এর ফলে তাদের ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে হয়। এজন্য তাদের এসব বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে অর্থ প্রদান করতে হয়। যা অন্য কাউকে এতটা করতে হয়না। তাই ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য বৈদেশিক ব্যয়ের সীমাবদ্ধতা থাকলে অনেকে সঠিকভাবে বিজনেস প্রমোশন করতে পারে না। ফলে পন্যের বাজারটা অনেকক্ষেত্রে বিদেশী কোম্পানীর দিকে যায়। আবার যারা প্রমোশন চালায় তারা ক্ষেত্রবিশেষে হুন্ডির আশ্রয় নেয়ার আশংকা তৈরী হয়।
২. সফট প্রোডাক্টস: ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের পেশাদারীত্বের সাথে ব্যবসা পরিচালনার প্রথম শর্ত একটি ই-কমার্স ওয়েব সাইট ও এ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন থিম, প্লাগইন ও কনসেপ্ট। যা অনলাইনে কিনতে হয়। এছাড়া বিজনেস ডেভলপমেন্ট এর জন্য বিভিন্ন সল্যুশন ছাড়াও ছবি, ইমেজ, ভিডিও, ডিজাইন টেম্পলেটসহ নানা সফট প্রোডাক্টস অনলাইনে কিনতে হয়। কোনো কোনো কনসেপ্ট বার বার কেনার প্রয়োজন হয়। তাই এক্ষেত্রে অন্য যেকোনো ব্যবসায়ের তুলনায় ই-কমার্স উদ্যোক্তা ও ডিজিটাল মার্কেটারদের অনেক বেশী বৈদেশিক লেনদেন করতে হয়। এমনকি ডোমেইন হোস্টিংও কেনার প্রয়োজন হয়।
৩. মেশিনারী বা গেজেট: যেসব সফটওয়ার অনলাইনে কিনতে হয় সেগুলোর সাথে সম্পর্কিত এমন অনেক মেশিনারিজও অনলাইনে কিনতে হয়। তাছাড়া ক্যামেরা লাইটিংসহ এমন অনেক জিনিস আছে যেগুলো ই-কমার্স শপ এর জন্য দরকার হয় যা তারা অনলাইনে কেনাকাটা করেন। বৈদেশিক ব্যায়ের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তাদের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
৪. ইলেন্টচুয়াল প্রডাক্টস: যেহেতু এটি একটি উদীয়মান খাত তাই কখনো কখনো মার্কেট রিসার্চ কিংবা ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত ও গবেষণাপত্র কিনতে হয়। কেউ কেউ বিদেশী ওপেনসোর্স ও তথা আউটসোর্সিং প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন সেবা নিয়ে থাকেন। অনেকে অনলাইনে বিভিন্ন ট্রেনিং সেশন ও কোর্সে অংশ নেন যেগুলোর জন্য অনলাইনে পে করতে হয়। তাই এই খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য বৈদেশিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে সীমা অন্য যেকারো চেয়ে বেশী হওয়া উচিত।
উপরোক্ত কারণে ই-কমার্স সেক্টরের উদ্যোক্তা এবং ই-ক্যাব সদস্যের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে তাদেরকে বৈধ চ্যানেলে সরকারকে প্রয়োজনীয় শুল্ক প্রদানের মাধ্যমে যেন তারা প্রয়োজনীয় পণ্য সেবা ক্রয়ের জন্য মার্কিন ডলার ব্যয় করতে পারে সেজন্য ব্যয়সীমা বার্ষিক ৫০ হাজার ডলার এবং একবারে ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত নির্ধারণ করার যুক্তিযুক্ত।
1,503 total views, 3 views today