আবুল খায়ের
অনেকেই হয়তো আছেন যারা ই-কমার্স ব্যাবসা শুরু করেননি এখনো। কিভাবে ওয়েবসাইট ডেভেলপ করাবেন বা ডোমেইন/হোস্টিং কোথায় পাবেন তা জানেন না। তাদের সুবিধার্থেই মূলত আমার এই লেখাটা।
ই-কমার্স ব্যবসা করতে আগ্রহী? কিন্তু ই-কমার্স ব্যবসার জন্য অবিচ্ছেদ্য যে জিনিসটা ওয়েবসাইট সেটা ডেভেলপ করতে কি কি লাগে তা এখনো জানেন না? লজ্জার কিছু নেই। জ্ঞানের কোন বয়স নেই। প্রতিটি ওয়েবসাইটই সাধারণত চারটি প্রধান ভিতের উপর দন্ডায়মান। এবার এগুলো সম্পর্কে একটু সংক্ষিপ্ত ধারনা দেওয়া যাক।
১. ডোমেইনঃ ডোমেইন একটি ওয়েবসাইটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ডোমেইন বলতে বোঝায় আপনার সাইটের নাম বা ঠিকানা। যেমনঃ www.yoursite.com। তো এই ডোমেইনের আবার বিভিন্ন শ্রেণী আছে।
- টপ লেভেল ডোমেইনঃ সাধারণত যেসব ডোমেইন এর এক্সটেনশন গুলো প্রথম সারির সেগুলোকে টপ লেভেল বা TLD ডোমেইন হিসেবে ধরা হয়। যেমনঃ .com, .net, .org, .info ইত্যাদি। এসব ডোমেইনের এক্সটেনশনগুলো স্বাধীন এবং আন্তর্জাতিক আদর্শের উপর দন্ডায়মান। বিশ্বব্যাপী এই ডোমেইনগুলোকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং প্রায় সকল ডোমেইন প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানই এই ধরণের ডোমেইন প্রদান করে থাকে।
- কান্ট্রি লেভেল ডোমেইনঃ এই ধরণের ডোমেইন সাধারণত দেশ ভিত্তিক হয়ে থাকে। এই ডোমেইন গুলোর ক্ষেত্রে টপ লেভেল ডোমেইনের সঙ্গে কান্ট্রিকোড হিসেবে একটি অতিরিক্ত এক্সটেনশন যুক্ত হয়। যেমনঃ com.bd, net.bd, org.bd, edu.bd, gov.bd ইত্যাদি। এসব ডোমেইন পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি যে দেশের ডোমেইন পেতে চান আপনার প্রতিষ্ঠান অবশ্যই সে দেশের স্থানীয় বাণিজ্য বা অন্য কোনোভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে। বাংলাদেশের CLD বা .bd ডোমেইন পেতে BTRC বরাবর আবেদন করতে হয়। অনেক থার্ড পার্টি ডোমেইন প্রোভাইডাররাও এ কাজটি করে দেয়। এছাড়াও ডোমেইনের আরও কিছু শ্রেণী রয়েছে। সবগুলো এখানে আলোচনা করা সম্ভব হচ্ছে না।
TLD ডোমেইন সাধারণত এক বছর মেয়াদী। একবছর পর পর নিবন্ধনের সন অর্থমূল্যে এগুলো নবায়ন করতে হয়। অবশ্য একসাথে দুই, পাঁচ বা দশ বছরের জন্যও তা নবায়ন করে নেওয়া যায়। ৮০০ টাকা থেকে ১২০০ টকার মধ্যে এই ডোমেইনগুলো বিভিন্ন কোম্পানি প্রদান করে থাকে।
CLD ডোমেইন অর্থাৎ .bd ডোমেইনগুলো দুই বছর মেয়াদী। প্রতি দুই বছর পরপর এসব ডোমেইন নবায়ন করতে হয়। নিবন্ধনের সময় .bd ডোমেইন পেতে আপনাকে ২০০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হতে পারে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে ভেদে। এর নবায়ন চার্জ ১৫০০ টাকা।
২. হোস্টিংঃ হোস্টিং বলতে বোঝায় আপনার ওয়েবসাইটের ডিস্ক স্পেস, ব্যান্ডউইথ, এবং সার্ভারকে। আরও সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করছি। ধরুন আপনার একটি কোম্পানি আছে। তার অবশ্যই একটি নাম বা ঠিকানা আছে। এখন সেই ঠিকানার জন্য অবশ্যই একটি কক্ষ বা অফিস স্পেস আছে।
অর্থাৎ একটি ফাঁকা ধরে আপনি আপনার অফিসকে সাজিয়েছেন, একটি নাম দিয়েছেন। ঠিক তেমনি হোস্টিং হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটের সেই ফাঁকা ঘর এখানেই আপনি আপনার সব দরকারি জিনিসপত্র রেখেছেন সুন্দরভাবে তা সাজিয়েছেন। একটি নাম দিয়েছেন অর্থাৎ ডোমেইন যুক্ত করেছেন। হোস্টিং এর মূল্যের ব্যপারে কিছুটা অস্বচ্ছতা আছে। সাধারণত সার্ভার, স্পেস এবং ব্যান্ডউইথের পরিমাণের উপর হোস্টিংয়ের মূল্য নির্ভর করে। যেমন আপনি যত ছোট অফিস নিবেন তার ভাড়া তত কম হবে। আবার যত বড় অফিস নিবেন তার ভাড়া তত বেশি হবে। আবার যত ভিআইপি এরিয়াতে অফিস নিবেন ভাড়া তত বেশি। অনুন্নত এলাকাতে অফিস নিলে অল্প ভাড়াতেও অনেক বড় অফিস পাওয়া যায়। কাজেই হোস্টিংয়ের ক্ষেত্রেও এই সূত্রটি খাটে। দেশের বাজারে আপনি ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০০ টাকা মূল্যের হোস্টিং পাবেন।
হোস্টিংও প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়। নিবন্ধনের সমমূল্যেই। তবে কোন কোন কোম্পানি মাসিক, তিন মাসিক, ছয় মাসিক চুক্তিতেও হোস্টিং চার্জ করে থাকে। হোস্টিং অনেক প্রকারের হয়। শেয়ার্ড, ডেডিকেটেড, ভিপিএস আরও অনেক প্রকারের আছে। এগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ডেডিকেটেড হোস্টিং ই-কমার্স সাইটের ক্ষেত্রে ভাল এটা জানিয়ে দিচ্ছি।
ডিজাইনঃ নাম (ডোমেইন) হল, অফিস (হোস্টিং) হল। এবার অফিসটাকে সুন্দর করে সাজানো দরকার তাইনা? এই সাজানোর কাজটাই হচ্ছে ওয়েব ডিজাইন। আপনার ওয়েবসাইটটি কিভাবে আপনার অডিয়েন্সদের সামনে প্রদর্শন করবেন সেটার উপর ভিত্তি করে ওয়েব ডিজাইন করা হয়। সাইটের রং, ফন্ট, ইমেজ, লোগো ইত্যাদি সবই ওয়েব ডিজাইনের প্রতিরূপ।
ডেভেলপমেন্টঃ অফিসের নাম, ঠিকানা দিলেন, অফিস নিলেন, সুন্দর করে সাজালেনও কিন্তু আরেকটা ব্যপার কিন্তু বাকি রয়ে গেছে। ধরুন আপনি আপনার অফিসে সুন্দর করে রং করেছেন। কিন্তু এই রং তো নিশ্চই কোন দেওয়াল বা পার্টিশনের উপর করেছেন। এই পার্টিশন বা ওয়েবসাইটের ফরমেশন তৈরির কাজই হচ্ছে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট। পার্টিশন তৈরি করতে যেমন ইট, কাঠ, লোহা, সিমেন্ট কল কব্জার দরকার পড়ে তেমনি ওয়েব ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রেও অসংখ্য কোড এবং বেশ কিছু ল্যাংগুয়েজের দরকার পড়ে। এটি সিএমএস ব্যবহার করেও কর যায় আবার মাই ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করেও করা যায়। তবে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে সিএমএস ব্যবহার করা।
তো জানা হল ওয়েবসাইট তৈরিতে কি কি লাগে ডোমেইন হোস্টিংয়ের মূল্যের ও ধারনা দেওয়া হল। এবার ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্টের মূল্য ধারণা দেওয়া দরকার।
ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট সাধারণত এক ব্যক্তিই করে থাকেন এবং প্রতিষ্ঠান থেকে করিয়ে নিলে অনেক ক্ষেত্রে ডোমেইন, হোস্টিং, ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট সব সেবা একই প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকেন। তবে এই কাজ ফ্রিল্যান্সারদের দিয়েও করানো যায়।
মূল্যের কথা উঠলেই আগে চলে আসে ই-কমার্স সাইটের ব্যপারটা। ই-কমার্স সাইট হচ্ছে সবচেয়ে উচ্চমূল্যের ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের একটি। তবে দেশের বাজারে দশ হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে এ কাজ করা হচ্ছে যেহেতু এখানে অধিকাংশ …… সবাই নতুন উদ্যোক্তা কাজেই আপনি দশ হাজার থেকে শুরু করে পঞ্চাশ হাজার টাকার মধ্যে আপনার সম্পূর্ণ সাইটটি আপনার চাহিদার ভিত্তিতে করে নিতে পারেন।
কোথায় পাবেন এসব সেবা?
দেশের এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অসংখ্য কোম্পানি ওত পেতে আছে এসব সেবা দানের জন্য। রয়েছে অসংখ্য ফ্রিল্যান্সারও। ই-ক্যাবেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এ ধরণের সেবা প্রদান করে থাকন ই-ক্যাব মেম্বার লিস্ট চেক করলেই আপনি এসব কোম্পানি এবং তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন।
সময় সল্পতার জন্য বিস্তরভাবে আলোচনা করতে পারলাম না তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা করে থাকলে তা সংশোধন করে দেওয়ার অনুরোধ রইলো। ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং ই-ক্যাবের সঙ্গে থাকুন আপনার ব্যবসার সফলতা কামনা করছি।
6,404 total views, 2 views today