ই-কমার্স এর ভিজিটর আনার জন্য আমার পরিচিত সবাই মনে করেন যে ফেইসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়া সবচেয়ে ভাল উপায়। আমি তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। আমার মনে হয় ভিজিটর আনার জন্য সবচেয়ে ভাল উপায় হল আপনার সাইটের একটি ব্লগ থাকা। অবশ্য আমি বলছি না যে ফেইসবুকে বিজ্ঞাপণ দেবার দরকার নাই বা আপনার পেইজের লাইক বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করার দরকার নেই। তবে আমার মনে হয় যে ব্লগের কার্যকারিতা আরও বেশি। এর কিছু কারণ রয়েছে যা আমি এই পোস্টে বিস্তারিতভাবে লিখতে যাচ্ছি।
১। আপনার পন্য সম্পর্কে তথ্য জানাতে ব্লগের বিকল্প নেই। আমাদের ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)- এর কথাই ধরুন। ব্লগে এখন পর্যন্ত ৩০ টি লেখা প্রকাশ করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে আমরা ই-কমার্স এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানাতে পারছি। আমি ব্লগিং, ভিজিটর আনা এসব নিয়ে লিখছি, কেউ হয়তো ডোমেইন হোস্টিং, কেউ মার্কেটিং, কেউ নতুন উদ্যোক্তা ইত্যাদি নিয়ে লিখছেন। এখন আপনার যদি আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে তথ্য জানাতে হয় তবে অবশ্যই ব্লগ কাজে দেবে। আপনি হয়তো মেয়েদের গহনা বিক্রি করছেন। সেখানে অনেক তথ্য ও আর্টিকেল দিতে পারেন মেয়েদের গহনা নিয়ে। ব্লগে কি লিখবেন সে নিয়ে আপনার অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে।
২। এখন বলতে পারেন শুধু শুধু আর্টিকেল লিখে কি লাভ? সব সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) এক্সপার্টরা একমত যে ব্লগ থাকলে আপনার ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিন এর সার্চ রেজাল্টে ভাল ফল করবে। এর কয়েকটা কারণ রয়েছে। যেহেতু ব্লগে নিত্য নতুন আর্টিকেল লেখা হচ্ছে সেহেতু গুগল জানতে পারছে যে আপনার ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট হচ্ছে। বেশি করে পেইজ ইনডেক্স হচ্ছে এবং ব্লগের লেখা গুলো অন্যদেড় ওয়েবসাইট, ফোরাম, ব্লগ, ফেইসবুক পেইজ থেকে লিংক পাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই গুগল ব্লগের কন্টেন্ট বেশি ভালবাসে। নিজেই একটু চিন্তা করে দেখুন, আপনার ই-কমার্স সাইটের প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন মানে হল কিছু পয়েন্ট তুলে ধরা মাত্র (রঙ, দাম, আকার ইত্যাদি)। কিন্ত ব্লগের লেখা সেই তুলনায় অনেক বেশি সমৃদ্ধ হতে পারে।
৩। ব্লগের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সাপোর্ট দেয়া যায় এবং সুন্দর আলোচনাও হতে পারে। যেসব বিষয় নিয়ে আপনার কাস্টমাররা জানতে চাই বেশি সেগুলো নিয়ে ব্লগ লিখতে পারেন। তাছাড়া তারা যেসব সমস্যা পাচ্ছেন সেগুলোর সমাধানও অনেক সহজে দেয়া যায়। অবশ্যই এটি প্রোডাক্ট টু প্রোডাক্ট ভেরি করে কিন্তু ব্লগের মাধ্যমে আসলেই ভাল সাপোর্ট দেয়া যায়।
৪। ব্লগ বনাম ফেইসবুক গ্রুপ ও পেইজঃ ই-ক্যাবের ফেইসবুক পেইজ, গ্রুপ এবং ব্লগ তিনটাই আমি চালাচ্ছি। বলতে দিধা নেই যে আমাদের ফেইসবুক গ্রপ দারুন একটিভ এবং প্রতিদিন কয়েক হাজার বার পড়া হয়। অন্যদিকে ব্লগ মনে হয়না ৫০০ বারের বেশি দিনে পড়া হয়। তাহলে আমি কেন ব্লগের গুণগান গাইছি? এর মূল কারণ হল ফেইসবুক গ্রুপে যাই পড়া হচ্ছে তা ফেইসবুকের লাভ কারণ ফেইসবুকের এলেক্সা র্যংক বাড়াচ্ছে, আমাদের ই-ক্যাবের ওয়েবসাইটের নয়।
৫। ফেইসবুক পেইজ বা গ্রুপের আরেকটা বড় সমস্যা হল লেখা খুঁজে বের করা। আমাদের গ্রুপে প্রতিদিন ৮-১০ করে পোস্ট পড়ছে এবং এজন্য অনেক ভাল লেখা হারিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে ব্লগে ক্যাটাগরি ও ট্যাগ ধরে খুব সহজেই লেখা খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও আমাদের ই-ক্যাব ব্লগে যেহেতু ফেইসবুক থেকে কমেন্ট করার উপায় রয়েছে সেহেতু ফেইসবুকে থেকেই আপনি কমেন্ট করতে পারেণ। তবে আবারো বলছি ব্লগ ও ফেইসবুক কোন শত্রু নয় বরং পরিপূরক।
৬। যদি আপনার নিশ (niche) ধাচের ই-কমার্স ওয়েবসাইট হয় (মানে আপনি একই ধরনের পন্য বিক্রি করেন) তাহলে অবশ্যই আপনার ব্লগ খোলা উচিৎ। কষ্ট করলে সেদিকে আপনি এক্সপার্ট হতে পারবেন এবং অনেকেই আপনার পরামর্শ চাইবে ঐ পন্যের ব্যপারে। ধরা যাক দুটো দোকান আছে, একটি দোকানের সেলস্ম্যান আপনি যে পন্য কিনতে চাইছেন সে সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারেণ এবং অন্য দোকানের সেলসম্যান পন্য সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। তাহলে কোন দোকান থেকে আপনি কিনতে চাইবেন? আরেকটি উদাহরণ দেই। ধরেন ব্লগ এবং ব্লগিং নিয়ে আমি ১০ টা আর্টিকেল লিখেছি এবং আরেকজন ১ টাও লেখেন নি। তাহলে আপনার ওয়েবসাইটে ব্লগ খুলতে চাইলে আপনি কাকে কাজ দেবেন? আপনার ব্লগে চেষ্টা করুন আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কিত ফিল্ড নিয়ে কিছু আর্টিকেল দিতে। এতে করে আপনি সেদিকে এক্সপার্ট হিসেবে গন্য হবেন। ব্লগের মাধ্যমে এটি করা খুব বেশি কঠিন নয়।
৭। ব্লগে একটা সেকশন রাখুন যেখানে আপনার সন্তুষ্ট ক্লায়েন্টরা তাদের সন্তুষ্টির কথা জানাতে পারবে পোস্ট দিয়ে। তাছাড়া প্রতি সপ্তাহে না পারেন প্রতি মাসে একজন করে ক্লায়েন্টের সাক্ষাৎকার দিতে পারেন। এতে করে যে কি লাভ হবে তা মনে হয় বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। এসব ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব সৎ থাকুন এবং মার্কেটিং ধাচের লেখা না দিয়ে ক্রেতাদের ফিডব্যাক তাদের ভাষায় দিতে দিন। হয়তো ৯০% ভাল কথা লিখে ১০% নেতিবাচক কোন মন্তব্য দিল সেটাও খুশী মনে গ্রহণ করুন।
৮। ব্লগের লেখা সব জায়গাতে সাবমিট করা যায়- বিশেষ করে সোশ্যাল বুক মারকিং এর কল্যানে। আমার এখনও মনে আছে আমার ব্যক্তিগত ব্লগের একটা লেখা একবার Fark.com এর হোম পেইজে নির্বাচিত হওয়াতে একদিনে ৪০,০০০ ভিজিটর এসেছিল। ব্লগের কন্টেন্ট ভাইরাল হবার সম্ভাবনা থাকে। আর ব্লগের লেখা সহজে পুরনো হয় না। যেমন এই লেখাটি ১ বছর পরেও হয়তো আপনি পড়ছেন।
৯। আপনার সামর্থ্য যদি কম থাকে তবে ব্লগ আসলেই ভাল মাধ্যম হবে ভিজিটর আনার জন্য। এজন্য দরকার শুধু লেখার চেষ্টা করা। নিজে না পারেন আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কাউকে ধরেন যে লিখতে পারে এবং কিছুটা কম টাকায় লিখে দেবে।
কিছু পরিসংখ্যানঃ বাংলাদেশে ব্লগ নিয়ে তেমন কোন গবেষণা বা সার্ভে পরিচালনা করা হয় না। তাই বাংলাদেশ ভিত্তিক কোন পরিসংখ্যানের কথা আমার জানা নেই। যে সব সংখ্যা দিচ্ছি সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক।
১। আমেরিকার ৮১% লোক ব্লগে প্রদত্ত তথ্যের উপর আস্থা রাখেন বা বিশ্বাস করেন।
২। যেসব ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের ব্লগ রয়েছে তারা ১২৬% বেশী বিজনেস লিড পান ব্লগ না থাকা ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের তুলনায়। বিজনেস লিড মানেই কিন্তু নতুন কাস্টমার এবং নতুন ব্যবসার সম্ভাবনা।
৩। যেসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ব্লগ আছে সেসব ওয়েবসাইট গুগোলের মত সার্চ ইঞ্জিনে ৪৩৪% বেশী পেইজ ইনডেক্স করা থাকে। (যারা সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে নুন্যতম ধারণা রাখেন তাদেরকে এ বিষয়টির গুরুত্ব নিয়ে বোঝানোর জন্য ১ টি শব্দও ব্যয় করার দরকার আছে বলে মনে হয় না)
৪। ৬১% আমেরিকান ভোক্তা ব্লগ পোস্ট পড়ে একটি পন্য কেনার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
৫। ৭০% ক্রেতা বিজ্ঞাপনের থেকে ইন্টারনেটের কন্টেন্ট পড়ে একটি কোম্পানি সম্পর্কে বেশী জানতে পারেন।
সুত্রঃ http://www.social4retail.com/the-blog-economy-blogging-stats-infographic-2014.html
আশা করি এ লেখা পড়ে আপনি একটা ব্লগ খুলতে আগ্রহী হবেন।
কিছু লেখার লিংক দিচ্ছি যেগুলো পড়ে দেখা উচিতঃ
6 Reasons E-Commerce Websites Need a Blog
Blogging For E-Commerce: Driving Revenue And Traffic
eCommerce Blogging: How to Drive Conversions with Content
7,379 total views, 2 views today