ই-ক্যাব থেকে আমরা এবং বিশেষ করি আমি সব সময় বলে থাকি যে ই-কমার্স একটি ব্যবসা এবং অন্য যে কোন ব্যবসার মত এখানে যেমন লাভের সম্ভাবনা রয়েছে ঠিক তেমনি লোকসানের ঝুকি রয়েছে। একটাই কারনে এ কথা বারবার বলি- ই-কমার্স নিয়ে যাতে কোন হুজুগ না উঠে এবং যারাই এদিকে আসবে তারা যেন বুঝে শুনে আসে। তার মানে এই নয় যে স্বপ্ন দেখতে নিষেধ করছি। স্বপ্ন হল এমন যে আমি কিছু একটা করবো মন প্রান দিয়ে এবং এজন্য যত বাধা আসুক হাসিমুখে ভালবেসে সেগুলো পার হবার চেষ্টা করবো। আর হুজুগের মানে হল অন্যরা করছে বলে অন্ধের মত কোন কিছুতে ঝাপ দেয়া। এই পোষ্টে আমি স্বপ্ন নিয়ে কথা বলতে চাই।
ইন্টারনেটের প্রসার এবং মোবাইল ফোন
বাংলাদেশে এখন মনে হয় প্রায় ১১/১২ কোটির মত মোবাইল ফোনের সংযোগ আছে। বিভিন্ন ধরনের সংযোগ পদ্ধতি মিলিয়ে প্রায় ৪ কোটি বা তার থেকে কিছু বেশি মানুষের ইন্টারনেট এক্সেস রয়েছে। এই সংখ্যা বাড়তেই থাকবে এবং প্রতিবছর এক কোটি করে বাড়বে বলে আশা করা যায়। তাই যারা ই-কমার্স ব্যবসায় নেমে পড়েছেন বা নামতে যাচ্ছেন তাদের জন্য আশার কথা হল এই যে সম্ভাব্য বাজারের আকার আগামি ১০ বছর ধরে বাড়তেই থাকবে। কোন এক বইতে পড়েছিলাম যে ২০৫০ সাল নাগাদ কমার্স বলে কিছু থাকবে না, সবই হয়ে যাবে ই-কমার্স। আমার মনে হয় এটি ২০২৫ সালের মধ্যেই ৭০% হয়ে যাবে।
ফেইসবুক এবং বেচাকেনা
বাংলাদেশে এখন ১ কোটির বেশি ফেইসবুক একাউন্ট রয়েছে। অনেকে ইন্টারনেট বলতে শুধু ফেইসবুককে বুঝে থাকেন। ফেইসবুকে পেইজ খুলে বিক্রি করছেন এমন মানুষের সংখ্যাও ২-৩ হাজার বা তার বেশি হবে। ফেইসবুকের জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকবে আগামি কয়েক বছর ধরে। ফেইসবুকের ব্যবহার যত বাড়বে অনলাইনে বেচা কেনার পরিমাণও বাংলাদেশে বাড়বে এটিও খুব বেশি বুঝিয়ে বলার কিছু নেই।
বিকাশ এবং মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস
বাংলাদেশে ই-কমার্স শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালের দিকে। কিন্তু তখন অনলাইনে লেনদেনের কোন উপায় ছিল না। তখন যদি বিকাস এর মত মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস থাকতো তাহলে আমার মনে হয় যে ই-কমার্সে আমরা আর ১০ টি বছর এগিয়ে থাকতাম। বিকাশ এবং এ ধরনের মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস গুলোর ব্যবহার বাড়ছে। এভাবে ইন্টারনেটের ও মোবাইল ফোনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, ফেইসবুকের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের ব্যপারে মানুষের বাড়তি আস্থা সব কিছু মিলিয়ে বলা যায় যে ই-কমার্স এর জন্য শক্ত একটা প্লাটফর্ম দাড়িয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরে
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সদস্য ভুক্ত প্রায় ১৩০ টি কোম্পানির মধ্যে অন্তত ৫০ টি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি যে ই-কমার্স এর বড় একটা বাজার এখনো ঢাকাতে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে অর্ডারের পরিমান বাড়ছে। ঢাকা মহানগরী ও এর আশেপাশের এলাকা মিলিয়ে দেড় থেকে দুই কোটি লোকের বাস এবং এর মধ্যে মাত্র ১৫-২০ লাখ লোকও যদি প্রতি দিন একবার করে অনলাইনে কেনাকাটা করে তবে এটাই একটা বিশাল বাজার।
দেশের বাইরে রপ্তানি
ই-কমার্স এখনো বাংলাদেশে সেভাবে রপ্তানি শিল্পের মধ্যে গন্য হয়না এবং এজন্য যারা অনলাইনে পন্য ও সেবা বিক্রি করছেন তারা নানা ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়ছেন। কিন্তু তারা অর্ডার পাচ্ছেন বিদেশ থেকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৭০-৮০ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশির বাস এবং এদের ১০% ধরলেও এটাও একটা বড় সম্ভাবনাময় বাজার।
ই-ক্যাব প্লাটফর্ম
ইফাত শারমিন আপুর ফেইসবুকে করা একটা কমেন্ট এখানে তুলে দিচ্ছিঃ
“ধন্যবাদ Razib Ahmed ভাইয়া। ই-ক্যাব আছে বলেই আমরা এক হতে পেরেছি, একে অন্যের সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারছি।
আমি ত কাওকেই চিনতাম না, তাই কাজ করতেও সাহস পাচ্ছিলাম না। এখন ই-ক্যাবের মাধ্যমেই এই সেক্টরের সবাইকে চিনতে পেরেছি, এগিয়ে যেতে পারছি।
এটা আমাদের নতুনদের জন্য বিশাল একটা সাপোর্ট।
ই-ক্যাব আরও এগিয়ে যাক, আরও সমৃদ্ধ হোক। আমরা আছি ই-ক্যাবের পাশে সব সময়।“
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের ৮ তারিখে। সাড়ে ৫ মাসে ই-ক্যাবের সবচেয়ে বড় সাফল্য হল এমন একটা প্লাটফর্ম তৈরি করা যেখানে অনেকে অনেককে চেনে এবং এর ফলে ব্যবসা করতে অনেক সুবিধা হচ্ছে।
টিকে থাকা এবং স্বপ্নটাকে ধরে রাখা
উপরে যা লিখলাম তাতে একথা প্রতীয়মান হয় যে এদেশে ই-কমার্স এর ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। তাই টিকে থাকার মানসিকতা ও ধৈর্য থাকতে হবে। স্বপ্ন দেখা শিখতে হবে। সেই স্বপ্ন মানে রাতারাতি কোটি পতি হবার স্বপ্ন নয়। বরং ই-কমার্স ব্যবসার মাধ্যমে একটু একটু করে সামনে এগিয়ে গিয়ে এক সময় বড় লোক হবার স্বপ্ন। প্রথমেই বলেছি স্বপ্ন মানে হল ভালবাসা যা আপনাকে কষ্টের সময় উৎসাহ যোগাবে। তাহলেই দেখবেন যে একদিন আপনার প্রতিষ্ঠান একদিন বাংলাদেশের আলিবাবা বা আমাজন হয়ে গেছে। আমাজন বা আলিবাবার শুরুটা খুব সাদামাটা ভাবেই হয়েছিল।
ভবিষ্যৎ অনলাইনেই এবং এজন্যই স্বপ্ন দেখাটা অনেক জরুরি। এমন এক দিনের কথা চিন্তা করুন যেদিন ১ কোটি লোক প্রতিদিন অনলাইনে কেনাকাটা করছে। হয়তো অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এমন দিন আসতে বড় জোর ২ বছর লাগবে। আমরা সবাই মিলে যত বেশি করে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করে যাবো তত শীঘ্র এমন দিন আসবে। ই-কমার্সে সাফল্য একদিন আসে না।
5,668 total views, 2 views today