আলিবাবা নিয়ে একটি সিরিজ লেখার প্রথম পোস্টটি দিয়েছি এবং ই-ক্যাব ব্লগের নিয়মিত পাঠকরা উপভোগ করেছেন। আলিবাবা নিয়ে যে কোন লেখাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি না এর প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা এর কথা বলা হয়। তাই আলিবাবা সিরিজের দ্বিতীয় পোস্টটি আলিবাবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি জ্যাক মা কে নিয়ে। বিজনেস ইনসাইডার এবং ইউ এস এ টুডে এর দুটি আর্টিকেল থেকে তথ্য ও ছবি নিয়েছি।
Source: Business Insider
আলিবাবার প্রাথমিক গণ প্রস্তাবনা (আইপিও) বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল আইপিও। আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান জ্যাক মা এখন চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। বর্তমানে মা এর সম্পদের পরিমাণ ২৫০০ কোটি ডলার। আলিবাবাতে তাঁর ৭.৮% স্টেক আছে এবং পেমেন্ট প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান আলি পে তে তাঁর স্টেক প্রায় ৫০%। মা এর উত্থান অনেকটা গল্পের নায়কের মতই। চীনের এক নিম্নবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় দুইবার ফেল করেন, অনেকবার চাকরি পাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন, জনপ্রিয় ফাস্টফুড চেইন কেএফসিতেও তিনি একবার চাকরির চেষ্টা করেন কিন্তু সেটাও জোটাতে পারেন নি। ইন্টারনেটে কম্পানি প্রতিষ্ঠা করেও তিনি ধরা চোটেই সফলতা পান নি। আলিবাবা ছিল তার তৃতীয় ইন্টারনেট কম্পানি।
জন্ম ও শৈশবঃ
Source: Business Insider
জ্যাক মা (চীনা নাম- মা ইয়ুন) ১৯৬৪ সালে পশ্চিম চীনের হোয়াং ঝু প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিন সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর এক বড়ভাই এবং ছোট বোন ছিল। জ্যাক মা যে সময়টায় বেড়ে উঠেছিলেন সে সময়ে চীনে কম্যুনিজমের দাপট। পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে চীনের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল না। তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব ভাল ছিল না। মা এর বাবা-মা গান গেয়ে বেড়াতেন। বাদ্যযন্ত্র সহকারে তারা গানে গানে গল্প শোনাতেন। তবে মাও জে দং এর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত এ ধরণের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
২০০৯ সালে চীনা লেখক ঝাং ইয়োং শেং জ্যাক মা এর আত্মজীবনী লেখেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, মা এর দাদা ছিলেন চীনের জাতীয়তাবাদী দলের একজন স্থানীয় অফিসার। চেয়ারম্যান মাও জাতীয়তাবাদী দলকে হারিয়ে দেবার পরে মা এর দাদাকে কম্যুনিস্ট পার্টির শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। মা এবং তাঁর আত্মীয়রা এ সময়টা খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে পার করেছিলেন।
Source: Business Insider
জ্যাক মা ছোট বেলা থেকেই লিকলিকে শরীরের অধিকারী এবং স্কুলে তাঁর সহপাঠীদের সাথে প্রায়ই মারামারিতে জড়িয়ে পড়তেন। মার্থা অ্যাভেরি এবং লিউ শিয়িং “আলিবাবা” বইতে জ্যাক মা বলেন, ” আমার চেয়ে শরীর স্বাস্থ্যে বড় ছেলেদের আমি মোটেও ভয় পেতাম না।” তবে মা এর প্রিয় শখ ছিল ঝিঁ ঝিঁ পোকা ধরা এবং ঝিঁ ঝিঁ পোকার লড়াই দেখা। ঝিঁ ঝিঁ পোকা সম্পর্কে তিনি খুব ভাল জ্ঞান রাখতেন তাদের আকার এবং শব্দ শুনেই তিনি বলতে পারতেন এটা কি ধরণের পোকা। মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রাচীন চীনে ঝিঁ ঝিঁ পোকা ধরা ছিল একটি জনপ্রিয় শখ কিন্তু চেয়ারম্যান মাও এর সময়ে এটিও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
Source: Business Insider
১৯৭৬ সালে মা এর বয়স ১২ বছর। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন চীন সফরকালে হুয়াং ঝু ভ্রমণ করেন।এর ফলে ভ্রমণকারীদের কাছে হুয়াং ঝু খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৭৬ সালে চেয়ারম্যান মাও এর মৃত্যুর পরে চীনে প্রচুর ভ্রমণকারী আসা আরও বেড়ে যায়। সেই সময়ে মা প্রতিদিন ভোরে ৫টায় উঠতেন এবং হেঁটে নতুবা সাইকেলে করে হুয়াং ঝুর প্রধান হোটেলে চলে যেতেন বিদেশী ভ্রমণকারীদের সাথে ইংরেজি ভাষা চর্চা করার জন্যে। এভাবে দীর্ঘ নয় বছর ধরে জ্যাক মা স্থানীয় ফ্রি ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে কাজ করেন এবং অনেকের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এরকম একটি বিদেশী পরিবারের সাথে তার সখ্যতা হয় এবং তাদের আমন্ত্রণে তিনি অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করেন। এ ভ্রমণের ফলে তার বিদেশ সম্পর্কে ধারণা বদলে যায়। পরে ওয়াশিংটনে এক সাক্ষাৎকারে মা বলেন “স্কুলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে আমি যা পড়েছি বা আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে যা জেনেছি তার থেকে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।”
শিক্ষাজীবনঃ
Source: Business Insider
ছাত্র হিসেবে জ্যাক মা মোটেও ভাল ছিলেন না। জাতীয় কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় তিনি দুইবার ফেল করেন। তৃতীয়বার পাস করার পরে তিনি হুয়াংঝু টিচার্স ইন্সটিট্যুটে ভর্তি হবার সুযোগ পান। তাঁর ভাষায় এটি ছিল হুয়াং ঝুর সবচেয়ে নিম্নমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। যা হোক, ১৯৮৮ সালে তিনি গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। কলেজে পড়া অবস্থায় তাঁর স্ত্রী ঝাং ইং এর সাথে তাঁর পরিচয়, পরিণয় এবং পাস করে তারা বিয়ে করেন। মা সম্পর্কে তাঁর স্ত্রী বলেন, “ ও খুব হ্যাণ্ডসাম নয় কিন্তু ও এমন সব কাজ করতে পারে যা হ্যাণ্ডসাম মানুষরাও করতে পারে না আর এ জন্যেই আমি ওঁকে পছন্দ করি।”
চাকুরি এবং ব্যর্থতাঃ
গ্রাজুয়েশনের পরে তিনি একটি স্থানীয় কলেজে পাঁচ বছর ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। তখন তাঁর বেতন ছিল মাসে ১৫ ডলার। এ সময়ে তিনি স্থানীয় কেএফসি, হোটেল এবং পুলিশে চাকরির আবেদন করেন এবং সেখানেও অকৃতকার্য হন।
ব্যবসাঃ
মা এবার সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি ব্যবসা করবেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি একটি অনুবাদ প্রতিষ্ঠান চালু করেন। কিন্তু তাতে তাঁর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলো না। তখনো তিনি টাকার জন্যে রাস্তায় মাল টানাটানি করতেন। ১৯৯৫ সালে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের অনুবাদক হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করার সুযোগ পান। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে দেনাদার সে টাকা তো দেয়ই নি উল্টো মা কে বন্দুক দেখান। তবে এ ভ্রমণে তাঁর সবচেয়ে লাভ হয়েছিল তিনি ইন্টারনেট সম্পর্কে জানতে পারেন। মা এর এক বন্ধু সিয়াটলে তাকে ইন্টারনেট দেখান এবং তখন একটা ব্যবসার আইডিয়া তার মাথায় আসে।
Source: Business Insider
মা লক্ষ্য করলেন যে “চীন” বা “বিয়ার” এ দুটি শব্দ কোন অনলাইন তালিকাতে নেই। চীনে ফিরে এসে তিনি একটি লিস্টিং সাইট চালু করলেন। পরে তিনি এটি সরকারের কাছে বিক্রী করে দেন। এরপরে তিনি চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। চাকরি শেষ করে তিনি হুয়াং ঝুতে ফিরে এসে তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে নেমে পড়েন।
আলিবাবা ডট কমঃ
Source: Business Insider
এরপরে মা তাঁর বন্ধুদের কাছ থেকে ৬০ হাজার ডলার ধার নিয়ে আলিবাবা ডট কম নামে একটি বি-টু-বি প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। চীনের রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্যের তালিকা দিতে পারবে যেখান থেকে বিদেশী ক্রেতারা এসব রপ্তানিকারকদের কাছে থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারবে।
চীনের অর্থনীতিতে তখন এক বিশাল পরিবর্তন শুরু হয়ে গিয়েছে। এ সময়ে ইন্টারনেট চীনে পরিচিতি লাভ করা শুরু করে। বেইজিং এর ইউনিভার্সিটি অভ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যাণ্ড ইকনোমিক্স এর চায়না রিসার্চ সেন্টার ফর ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট এর পরিচালক অর্থনীতিবিদ ফেং পেংচেং এর ভাষ্যমতে সে সময়ে চীনে ক্ষুদ্র ও মাঝারী প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্যে ঋণ যোগাড় করা ছিল কষ্টকর এবং তাদেরকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হতো। আলিবাবা এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যে বিশাল আশির্বাদ হয়ে দাঁড়ায়।
Source: Business Insider
খুব তাড়াতাড়ি আলিবাবা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে লাগল। ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে আলিবাবা গোল্ডম্যান স্যাক্স থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার এবং সফটব্যাঙ্ক থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পায়। জ্যাক মা তাঁর প্রতিষ্ঠান নিয়ে খুবই আশাবাদী ছিলেন।
২০০৫ সালে ইয়াহু আলিবাবা ডট কমে ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ৪০% স্টেইক কিনে নেয়। এটা ছিল আলিবাবার জন্যে বিশাল অর্জন। চীনের বাজারে আলিবাবার সাথে তখন ই-বে এর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এ বিনিয়োগের ফলে আলিবাবা ও ইয়াহু দুজনেই লাভবান হয়।
Source: Business Insider
২০১৩ সালে মা আলিবাবার সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ান তবে নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ঐ বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে আলিবাবার প্রাথমিক গণ প্রস্তাবনা ছাড়া হয় বাকীটা শুধুই ইতিহাস। আলিবাবার এ ঐতিহাসিক সাফল্যে যুক্তরাষ্ট্রের সিএনবিসি চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে জ্যাক মা বলেন, “আজ আমরা মানুষের টাকা নয় তাদের বিশ্বাস অর্জন করেছি।”
আলিবাবার কর্মচারীর চোখে জ্যাক মাঃ
আলিবাবার সাফল্যের আরেকটি বড় কারণ মা এর ব্যক্তিত্ব। তিনি মেধাবী ও পরিশ্রমী ব্যক্তিদের পছন্দ করতেন এবং তাদের সাহায্য করতেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ এবং তাঁর আচরণ অনেক মেধাবীদেরকে আকৃষ্ট করে।
জ্যাক মা আলিবাবার অফিসে সবসময়ে একটা হাল্কা পরিবেশ তৈরি করে রাখতেন। আলিবাবা প্রথমবার লাভের মুখ দেখার পরে তিনি সব কর্মচারীদেরকে একটা করে সিলি স্ট্রিং এর স্প্রে ক্যান উপর দেন।
Source: Business Insider
কাজে যাতে উৎসাহ আসে সেজন্যে মা তাঁর কর্মচারীদের নিয়ে এভাবে ব্যায়াম করতেন।
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আলিবাবার আইপিও’র সাফল্যের পরে প্রতিষ্ঠানটির হুয়াং ঝু হেডকোয়ার্টারে এক বিশাল পার্টির আয়োজন করা হয়। আলিবাবার এক কর্মচারী এ পার্টিতে তার প্রেয়সীকে বিয়ের জন্যে প্রস্তাব করেন।
Source: Business Insider
মা তাঁর কর্মচারীদের বলেন যে তাঁর কর্মচারীরা তাদের অর্জিত সম্পদ মহৎ কাজে ব্যয় করবে এবং মানুষের জীবন বদলে দেবে এমনটিই তিনি তাদের কাছ থেকে আশা করেন।
পোর্টার এরিসম্যান আলিবাবা ডট কম এর প্রথম দিককার একজন কর্মী। এ বছরের মে মাসে তাঁর বই “Alibaba’s World: How a Remarkable Chinese Company is Changing the Face of Global Business” প্রকাশিত হয়। এ বইতে তিনি আলিবাবাতে তার কাজের স্মৃতি এবং জ্যাক মা সম্পর্কে লেখেন। এ বইটিতে জ্যাক মা এর অনেক মজার উদ্ধৃতি আছে। এরিসম্যানের চোখে মা একজন অত্যন্ত বন্ধুবৎসল, আন্তরিক একজন মানুষ। তাঁর দূর্বলতা হচ্ছে যে তিনি অনেক সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যার কারণে তাঁকে অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
জ্যাক মা এর পারিবারিক জীবনঃ
Source: Business Insider
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে আলিবাবার সাফল্য জ্যাক মা এর সম্পত্তি আরো বাড়িয়েছে। বর্তমানে তিনি চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কিন্তু তাঁর দৈনন্দিন জীবনে প্রাচুর্যের জৌলুস নেই। মা এর প্রিয় শখ কুংফু ফিকশন পড়া, পোকার খেলা এবং তাই-চি (এক ধরণের মার্শাল আর্ট) চর্চা। তিনি চীনের জনপ্রিয় অভিনেতা জেট লি এর সাথে মিলে তাই-চি প্রমোট করে থাকেন। যেখানেই তিনি যান না কেন তাঁর সাথে সব সময়ে একজন তাই-চি প্রশিক্ষক নিয়ে যান।
বর্তমানে মিডিয়ার যুগে জ্যাক মা এর মতো ধনী ব্যক্তিরা সব সময়ে মিডিয়াতে আসেন। কিন্তু জ্যাক মা’র পারিবারিক জীবন মিডিয়াতে সেভাবে আসেনি। তাঁর ব্যক্তিগত কোন স্ক্যান্ডাল নেই। তাঁর স্ত্রী ঝাং ইং, এক ছেলে, এবং এক মেয়ে নিয়ে জ্যাক মা সুখেই আছেন। তার ছেলে বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অভ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে’র ছাত্র।
আলিবাবা গ্রুপ (১) লিঙ্কঃ http://blog.e-cab.net/আলিবাবা-গ্রুপ-১/
23,157 total views, 3 views today