অদ্ভূত পেশার মানুষেরা
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
পৃথিবীতে যুগ ও সময়ের সাথে মানুষের কৃষ্টি কালচার যেমন বদলে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে পেশাও। নতুন নতুন পেশার জন্ম হয়েছে আবার হারিয়ে গিয়েছে অনেক পেশা। আমাদের দেশেও নানা অদ্ভুত পেশা রয়েছে আমরা সব সময় দেখি বলে এগুলো আমলে নেইনা। থানার দালালী, তফসিল অফিসের দালালী এগুলো নিশ্চয় অন্যান্য দেশে নেই। নেই নেতাদের চামচা পেশাও।
আজকাল অনেকে নিজের পেশা ও কর্মসংস্থান নিয়ে চিন্তিত। একদল ই কমার্ষ উধ্যোক্তা ই কমার্স করবেন কিনা ভেবে কুল পাচ্ছেন না। আরেক দল কোন পন্য নিয়ে শুরু করবেন সেটা ভেবে দোনামোনায় আছেন আসল কথা হচ্ছে আপনি যা করতে চাচচ্চেন তা ভালো বোঝেন কিনা? এবং এই পেশাটার প্রতি আপনার শ্রদ্ধা আছে কিনা। আর এর চাহিদার বিষয়তো নিশ্চয় আপনাদের বলে দিতে হবেনা। চলুন আমরা আজ কিছু আজিব পেশার খবর জেনে নিই। কারণ আজকাল আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নিতে হয়। কেননা জাহাজে করেই আদা বিদেশ যায়।
PiC: http://farm8.staticflickr.com
কলম মেইকার
আমাদের দেশে ষাট এবং সত্তুরের দশকে স্কুল কলেজের সামনে কলম মেইকাররা বসত। অনেকে বসত আমার দোকান খুলে। তখন ঝরণা কলম ছিলো কালি ভরে ব্যবহার করতে হকে। কলমের মধ্যে নিব টিউবসহ বিভিন্ন পার্টস ছিলো এগুলো আবার কখনো কখনো বিকল হয়ে যেতো। একটা কলমের আবার দামও ছিলো খুব। তাই একটু আধটু মেরামত করেই চালিয়ে দেয়া যেত। আর এ মেরামত করার জন্য কলম মেকাররা কলেজের সামনে গামছা বা মাদুর পেতে বসতো।
ছাইয়ের ফেরীওয়ালা
আমরা কথায় কথায় বলি দূর ছাই, অথবা কিসব ছাইপাশ। মানে ছাই একটা ফেলনা জিনিস এটা কোন কাজের নয়। আকাইমা জিনিস। কিন্তু আজকাল ওতো প্রায় সময় একটা ডাক শুনতে পাই আমরা। ছাই লাগবে? ছাই? কিন্তু আজ থেকে ৫০ বছর আগেও যদি কেউ বলতে যে ফেরী করে ছাই বিক্রি হয় তখনকার লোকেরা হয়তো বিশ্বাস করতোনা। কিন্তু আমরাতো দেখছি। আমাদের চোখের সামনে ফেলনা ছাই বিক্রি হচ্ছে।
র্যাট ক্যাচার- ঈদুর ধরা
ইউরোপে কখনো ইঁদুরের উপদ্রব খুবই বেড়ে যেত, সেটা আমরা হ্যমিলনের বাশিওয়ালা গল্প থেকে জেনেছিলাম। মজার ব্যাপার হলো এই ইদুর ধরার জন্য বিড়াল নয় মানুষদের নিয়োগ দেয়া হতো। এদের বলা হতো rat-catcher । এ লোকদের কাজ ছিল ইঁদুর খুঁজে বের করে সেগুলোকে ধরা। ইঁদুরের কামড় ও তা থেকে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও এ পেশার তখন বেশ কদর ছিলো।
ছারপোকাকে রক্ত খাওয়ানোওয়ালা
মুম্বাইতে পারসিকদের একটা সম্প্রদায় থাকে যারা ছারপোকাকে ঘরের লক্ষী মনে করে। তো ঘরের বারান্দায় এরা একটা বিছানায় ছারপোকাদের পালে। বিছানার আশপাশে ঔষধ দিয়ে রাখে যাতে এগুলো ঘরে আসতে না পারে। কিন্তু তাদেরতো কিছু খাবার চাই। ফলে এখানে একটি পেশার জন্ম হলো তা হলো একদল লোক থাকে তারা নিজেরা ভাড়ায় চারপোকার বিছানায় শোও। এক ঘন্টা ২ ঘন্টা। 1/2শ রুপির কন্টাক্ট।
ঘুম জাগানিয়া
এক সময় কলিং ঘড়ি ছিলোনা। তখনো অনেকে ঘুম থেকে সময়মত উঠতে পারতোণা। ইউরোপে সেই সময়কালে একদল লোকছিলো যারা ভোরে লোকদের ঘুমথেকে তুলে দেয়ার চাকরি করতো। এসব লোকফি েএর বিনিময়ে মানুষের ঘরের দরজা জানালা ধরে আঘাত করে তাদের জাগিয়ে দিতো। টেবিল ঘড়ি এসে বেচারাদের ভাত মারলো। এই এলার্ম ঘড়িকে না জানি তারা কতো অভিশাপ দিয়েছিলো।
ঘুমের বিছানা ভাড়া:
একবিশংশ শতকে এসেও নানা আচানক পেশার জন্ম হতে দেখি। লন্ডন শহরে এক ভদ্রলোক একটি ঘুমের হোটেল খুলেছেন। দুপুর বেলায় যারা কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায় একটু ঘুমিয়ে নিলে শান্তি আসে। তারা তার সেবা নিতে আসে। মাত্র ½ ঘন্টার জন্য ঘুম। ঘন্টা হিসেবে বিল। আমি হলে ভাই মোটেও ঘুমাতে পারবোনা। পকেটে আছে ১০ পাউন্ট। বেশী ঘুমালে বাকী টাকা তেব কোথ্তুকে।
চিঠি লিখক:
ত্রিশ বছর আগেও ছিলো পোস্ট অফিস থানা কোট কাচারির সামনে তারা দাড়িয়ে থাকতো। এরা মানুষদের চিঠিপত্র লিখে দিতো। যারা লেখা পড়া জানে না তারা পয়সা দিয়ে এদের কাছ থেকে লিখিয়ে নিতো। গ্রামে কখনো কখনো প্রেমের চিঠিপত্রও ভাড়া করা লোকদের দিয়ে লেখানো হতো।
কালিফোর্ণিয়ার লজ এঞ্জেলস নগরীতে একটি কো¤ক্সানী আছে তার নাম ‘লাভারস লেটারস ইংক’। যেসব লোকেরা ভালো প্রেমের ভাষা জানে না বা র্মূখ তাদের সুন্দর সুন্দর প্রেমের চিঠি এরা লিখে দিতো। একাবার হয়েছে কি এক ভদ্রলোক খাঁটি প্রেমের ৫ খানা চিঠি লিখিয়ে ৫ জন তরুণীকে পাঠালো। এই সহীহ শুদ্ধ ও নিখুঁত প্রেমের চিঠি পড়ে সবাই তার প্রতি প্রেমে পড়লো। ইউরোপেতো কবে থেকেই ক্রেডিট কার্ড প্রচলন হয়েছে, আমেরকিাতেও এটা অবশ্য সেদিনের ঘটনা। কিন্ত তিনি এই কো¤ক্সানীর বিল প্যামেন্ট করেছেন যে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে তা ছিলো তাদের স্বামী স্ত্রীর যৌথ একাউন্টের। ( দি টাইমস ১৪-২-৯৪ ইং।)এখন হয়তো সেই দিন আর নেই।
নির্বাচনী শিল্পী
আমাদের দেশে নির্বাচনের সময় এদের দেখা যায়। যদিও এরা অনেকে লোককবি বা পালাগান গায়। কিন্তু গ্রামে গজ্ঞে ভোটের হাওয়া বইলে এরা নির্বাচনের মঞ্চে প্রার্থীর জয়গান গেয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। আজকাল ডিজিটাল রেকডিং এর যুগে এদের ভাত মরেছে বলা যায়।
পুরুষের অন্তর্বাস ডিজাইনার
পোষাক তেরীর জন্য মাফ ঝোক দরকার হবেই। পুরুষের অন্তবাস ডিজানের জন্য নাকি কাটায় কাটায় মাপ লাগে নইলে সেটা আরামদায়ক হয়না। কিছু মানুষ আছে যারা পুরুষের পরনে থাকা অবস্থায় অন্তবাসের মাপ নিয়ে সেটা বানায়।
গরুর ডাক্তার হলে আমাদের দেশে অনেকে রসিকতা করেন। পশু ডাক্তার আসলেই মগান পেশা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পশুপাখির ডাক্তারদের সম্মানের চোখে দেখা হয়। কিন্তু ঘোড়ার ডাক্তার থাকে তাও আবার শুধ দাঁতের তাহলে তেমন হবে।? হ্যাঁ, আসলেই ঘোড়ার দাঁতের ডাক্তার রয়েছে। এদেরকে বলা হয় “ইকুইন ডেন্টিস্ট” বলা হয় এদেরকে। দাঁত দেখে ঘোড়ার বয়স নির্ণয় করা থেকে শুরু করে দাঁতের কোন রকমের রোগ সারিয়ে তোলা সব কাজে এদের দায়ে পড়ে।তো আপনি নিশ্চয় বলবেন সেতো ঘোড়ার ডেন্টিস্ট। এবার আপনি যদি জানতে চান আচ্চা ঘোড়ার কি কোন ডেন্টাল কলেজ আছে তাহলে এরা এটা শিখে কোথায়? এর উত্তরে আমার বোকা বনে যাওয়া ছাড়া আর কিছু বলার নেই।
ছবি: www.chandpurnews.com284 × 194Search by image
ইয়ার ক্লিনার
না এয়ার কন্ডিশন ক্লিন করেনা এরা পরিষ্কার করে কান। প্রতিদিন রাস্তায় 2/1 জনের দেখা মেলে। বাংলাদেশের শহরে গ্রামে এরা এখন স্বাভাবিক কিন্তু অন্যদেশে হলে হয়তো অবাক হওয়ার ব্যাপার হতো। হাতুড়ে এই ক্লিনারদের সেবা নিয়ে থাকেন অনেকে। এখন আমি যদি প্রশ্ন করি তারা এটা কোথায় শিখে। বলবেন ওস্দদের কাছে।
পটচিত্রকর নয় পট প্রদর্শণকারী
পটগান আমাদের লোকসাহিত্যের এক সমৃদ্ধশাখা। সুন্দর গানের সাথে পেছনে পটভূমিতে সুন্দর অঙকিত চিত্র প্রদর্শণ করা হয়। এটাতো খুব স্বাভাবিক যে পেটে আঁকা সেইসব চিত্রগুলো প্রফেশনালচিত্রকররা একে থাকেন। তাদেরকে বলা হয় চিত্রকর বা পোটো।
কিন্ত এর সাথে আরেকটি পেশা রয়েছে। যারা পট আকেন না শুধু পট দেখান। আমাদের দেশের বাইস্কোপ ওয়ালাদের মতো। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেনিনিপুর, বীরভূম এসব জেলায় এখনো এদের দেখা যায়। বিভিন্ন মেলায় বা বাজারে এটা পট দেখিয়ে বেড়ায়।
তারা মূলত সাপুড়ে পট দেখানোর সময় তারা গানও গায়। সাপের কামড়ের জরিবুটি তাবিজ কবচ বিক্রি করাও তাদের কাজ। বংশ পরম্পরায় চন্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চৈতন্য লীলা-র গান গাওয়া তাদের পূর্বপুরুষের পেশা।তারা পটুয়াদের কাছ থেকে পট কিনে আনেন প্রদর্শণ করার জন্য।
সূতরাং কি বেচবেন আর কিভাবে বেচবেন এতো ভাবনা করে কি হবে? ছোট বেলায় ছেলে ধরার নাম শুনেননি, এমনলোক কি আছে? আমার কাছে আজো রহস্য হয়ে আছে এই ছেলেধরা। এর নাম শনুলে ভয়ে বুকটা শুকিয়ে যেত।
এই লেখা তৈরীতে আমি নিচের সূত্রের সাহায্য নিয়েছি
http://tunerpage.com/archives/437231
সূত্র: দজ্জালের পা, হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ, মুনমুন পাবলিশিং হাউস, ঢাকা ২০০৪
http://edis.ifas.ufl.edu/ig083
– See more at: http://www.priyo.com/2014/01/02/s47562.html#sthash.jylv7hl8.dpuf
http://www.bongodorshon.com/home/haterkaj_details/43
6,908 total views, 2 views today